বিলাল ফিলিপসকে সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে ঢাকা ত্যাগে বাধ্য করানোতে আবারও প্রমাণিত হইল যে সেক্যুলারিজম শব্দের অর্থ ধর্মনিরপেক্ষতা নয় বরং এর সঠিক অর্থ ইহজাগতিকতাবাদ। Secular শব্দের উৎস মূল হচ্ছে ল্যাটিন শব্দ saecularis, যার অর্থ ইহজাগতিকতা। অর্থাৎ ধর্মীয়ভাবে অনুপ্রাণিত আদর্শের লক্ষ্য যেখানে ইহজাগতিক এবং পারলৌকিক উন্নতির দুটোই, সেখানে সেক্যুলার রাষ্ট্রের সকল কর্মকান্ডের লক্ষ্য হচ্ছে কেবল ইহজাগতিক উন্নতি। সেক্যুলারিজমের সাথে ধর্মের এই দ্বন্দ্ব চিরন্তন কারণ সেক্যুলারিজম রাষ্ট্রের আদর্শকে বস্তুকেন্দ্রিক ইহজাগতিকতায় মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। ইউরোপে সেক্যুলারজিমের উত্থান হয়েছে খৃষ্টধর্মের চার্চের সাথে বিদ্রোহ করে। এখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সেক্যুলারপন্থীরা একই রকমের বিদ্রোহ করতে চান। এক্ষেত্রে তারা খৃষ্টধর্ম সম্পর্কে ইউরোপের অভিজ্ঞতার সবটুকু ইসলামের উপরে প্রয়োগ ঘটাতে চান। কিন্তু খৃষ্টধর্ম সম্পর্কে চার্চের বয়ানের সাথে ইসলামের যে আকাশ আর পাতালের তফাৎ আছে সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করার শক্তি তাদের নেই। সেক্যুলারিজম তথা ইহজাগতিকতাবাদকে তারা এখন নিজেদের জন্য ধর্ম বানিয়ে নিয়েছেন। শাহবাগের ছয়দফা দাবীর মধ্যে অন্যতম দাবী ছিল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। এমনকি ইমরান এইচ সরকারের গণজাগরণ মঞ্চের সাথে বিদ্রোহ করে 'রুমি স্কোয়াড' নামের যে গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছিল সেখানেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী বলবৎ ছিল। বাংলাদেশের জন্য এটা ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের শামিল। অর্থাৎ শাহবাগের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে ইসলামী রাজনীতি মুছে দেওয়া। তাদের বয়ান অনুযায়ী এদেশে কেবল বস্তুকেন্দ্রিক আদর্শ যেমন পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্রই কেবল থাকবে, বাকি সব নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির যে বিপুল জনসমর্থন আছে তা শাহবাগের ফ্যাসিবাদী বয়ানে সামান্যই গুরুত্ব পায়। এটা একধরণের সেক্যুলার মৌলবাদিতা যেখানে সেক্যুলার গোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দমন নিপীড়নের মাধ্যমে ভিন্ন আদর্শকে নির্মূল করে ইহজাগতিক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইসলাম সম্পর্কে যতটুকু জানি তা থেকে মোটা দাগে বলা যায়, ইসলামী আদর্শ রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিতেই দেখে। তাই সাম্প্রদায়িকতা বনাম অসাম্প্রদায়িকতার বিতর্ক এখানে প্রযোজ্য নয়। দুঃখজনকভাবে, শাহবাগীরা ইসলামী আদর্শ সম্পর্কে ভুল ধারণায় আছে যে কারণে তারা একে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে। অথচ ইসলামের সাথে ধর্মনিরপেক্ষতার কোন দ্বন্দ্ব নেই, তার দ্বন্দ্ব সেক্যুলারিজম নামের ধর্মের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের আদর্শকে কেবল ইহজাগতিকতায় সংকুচিত করে ফেলার প্রচেষ্টার সাথে। বিলাল ফিলিপস মুসলিম বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামী স্কলার। বাংলাদেশের সেমিনারে তাঁর আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল 'সম্পদ পরিশুদ্ধকরণ এবং মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর ঐক্য'। খাতা কলমে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করলেও নিছক ধর্ম বিষয়ক এই আলোচনাকেও সেক্যুলার মৌলবাদীদের ইহজাগতিক আদর্শের জন্য থ্রেট মনে হয়েছে। শাহবাগের তথাকথিত জাগরণের কথাই বলুন আর বিলাল ফিলিপসকে সেমিনার করতে বাঁধা দেওয়ার ঘটনাই বলুন, সবই একই সম্পর্কসূত্রে বাঁধা। এবং সেটি হচ্ছে, সেক্যুলারিজম (ইহজাগতিকতাবাদ) এর সাথে ইসলামের চিরন্তন দ্বন্দ্ব।
~ Ahmad Musaffa
No comments:
Post a Comment