সময়টা ইশার পর। আলো আধারির একটু নির্জন রাস্তায় হাঁটছিলাম একা একা। হঠাৎ সামনে একটা রিকশা এসে থামল। রিকশা থেকে নেমে আসলো এক তরুণ। বেশ সতর্কতার সাথে ডানে বায়ে তাকিয়ে রাস্তায় মানুষের ভিড়ে মিশে গেল। রিকশায় বসে থাকা তরুণী মুখে কাপড় চাপা দেওয়া, হয়ত সাধারণের কাছে নিজের পরিচয় গোপনে চেষ্টারত। এই তরুণ তরুণীরা যখন বাসায় ফিরে তখন তাদেরকে কি কোন জবাবদিহি করতে হয়? বাবা মায়েরা কি জিজ্ঞেস করে তাঁরা এতক্ষন কোথায় ছিল??
বাড়ীতে থাকলে এধরনের দৃশ্যগুলো রাস্তায় বেরোলে প্রায়ই চোখে পড়ে। বাড়ীর পাশের সাইবার ক্যাফেতে জুটি বেঁধে নিয়মিতই যায় কিছু তরুণ তরুণী। সেখানে একটু আড়ালে তাঁরা কি করে তা ক্যাফের কর্মচারীরা রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা করে। দুঃখের যায়গাটা হল এই ছেলেমেয়েগুলোর সাথে আমার রাস্তায় কোন না কোন সময় দেখা হয়। স্কুল কলেজের ড্রেস পড়ে কিংবা ভদ্র, শান্ত চেহারার বাবা মায়ের সাথে যখন এদের সাক্ষাৎ মিলে তখন সেসকল বাবা মায়েদের জন্য আমার প্রচণ্ড মায়া হয়। আর তখনি আমি ভাবি এরা হয়ত আমার আদরের ভাইটি নয়, আমার আদরের বোনটি নয় কিন্তু কারো না কারো আদরের ভাই/বোন। তাদের মায়েরা এখনো হয়ত সন্তানকে হাতে তুলে খাইয়ে দেন। এদের বাবা মায়েরা সন্তানের পরীক্ষার রেজাল্টের খবর রাখে, স্কুল কলেজের খবর রাখে, তাদের ক্যারিয়ার কোনদিকে গেলে ভালো হবে সেই খবর রাখে। শুধু খবর রাখেনা ছেলেমেয়ে কোথায় যায়, কি করে!! আল্লাহ্ কুরআনে বলেন,
"মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তায়ালা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।" [সূরা তাহরিমঃ ৬]
সন্ধ্যার পড়ে রস্তায় কোন রিকশা কিংবা সিএনজিতে ভুলে চোখ গেলে লজ্জায় মাথা কাটা যায়। এসব অকালপক্ক ছেলেমেয়েগুলোর প্রকাশ্য ব্যভিচার 'বয়সের দোষ' হলেও বাবা মায়েদের লজ্জায় মাথা কাটা যায় যখন দাড়িওয়ালা ছেলেটা বিয়ের কথা তোলে! যখন সে রাস্তা ঘাটে, পার্কে, অন্ধকার কফি শপে অশ্লীলতার পসরা সাজিয়ে পথচারীদের বিনা খরচে প্রাপ্তবয়স্ক মুভি দেখার বিনোদন না যুগিয়ে এসব থেকে পবিত্র থাকার আর্তি জানায়, কেবল তখনি বাবা মায়েরা সন্তানের ভবিশ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।
ছেলে মেয়েকে দেশের সেরা সেরা বিশ্ববদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে লোকসমাজে নিজেদের স্ট্যাটাস বৃদ্ধির তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে কেউ কেউ। তাদের ছেলেমেয়েদের এসব আধুনিক রঙ্গশালায় এসে ব্যভিচার আর নষ্টামির আমলনামা ঢের দেখেছি! গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝোপে ঝাড়ে জৈবিক চাহিদা চরিতার্থ করে বন্ধুদের সাথে রসালো বর্ণনা করে আড্ডা জমায় আদরের সন্তানেরা। মোবাইলের লাউড স্পিকারে বান্ধবির সাথে অশ্লীল কথোপকথন বন্ধুদের নিয়ে উপভোগ করে সভ্য সমাজের ভদ্র বাবা মায়েদের স্মার্ট ছেলেরা! আর তাদের বাবা মায়েরা ঠিকই বলে বেড়ায় " আমার ছেলে/মেয়ে কিন্তু আর দশজনের মত না"! আমার খুব ইচ্ছে করে এসব বাবা মায়েদের তাদের "আর দশজনের মত না" গর্বের সন্তানের নষ্টামির আখলাখের সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিয়ে বলি, "এই নেন আপনার আখিরাতের সঞ্চয়"!!
একদিন বয়সের ভারে নুয়ে পড়বে শরীর। ঝুলে পড়বে যত্ন করে রাখা মসৃণ চামড়া। থাকবেনা রাস্তা ঘাঁটে জৈবিক চাহিদা চরিতার্থ করার বুনো মাদকতা। এই অশ্লীলতা আর নষ্টামির সময়গুলো নিয়ে আমরা আকাশের ওপারে অনন্ত এক জীবনের দিকে পরিচালিত হব।
খুব বেশী দেরী নেই। খুব শীগ্রই আমরা একটি সমতল ভূমিতে একত্রিত হতে যাচ্ছি। আমরা মিলিত হতে যাচ্ছি আমাদের রবের সাথে একাকি, সম্পূর্ণ একাকি! আমাদের প্রশ্ন করা হবে, যৌবনের শক্তি সামর্থ্য কোন কাজে ব্যয় করেছ? জীবন কোন পথে ব্যয় করেছ? কি উত্তর জমা করেছি তার জন্য??
৭০০০০ ফেরেশতা ৭০০০০ সেঁকল দিয়েও বেঁধে রাখতে পারছে না জাহান্নামকে। এত তীব্র গর্জন করবে সে জাহান্নামীদের দেখে। নষ্ট, ভ্রষ্ট আর উদ্দাম তারুন্যের এই সময়গুলোকে নিজ হাতে ধ্বংস করার আগে চুলার আগুনে একটু হাত দিয়ে দেখিস তো, আগুন সইবার ক্ষমতা কেমন!!
Collected from
Brother
ইউসুফ আহমেদ