বিয়ে না হলে তাতে কি ?? সে তো আমার বর (Husband)!!

ভার্সিটিতে প্রায় শেষ সেমিস্টার, সামনের মাসেই ফাইনাল পরীক্ষা। কিছুদিন ধরে গত চার বছর এর কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে জল্পনা কল্পনা করছিলাম। সমাজের তুমুল পরিবর্তনের কিছু অবাক করা চিত্র ধরা পড়লো। তার মধ্যে খুব গুরুতর একটা সমস্যা নিয়ে লেখার অভিপ্রায় জাগলো।
আমার ক্যাম্পাস যেহেতু শুধু মেয়েদের, তাই গত চার বছর বেশ স্বাচ্ছন্দে কেটেছে। ভার্সিটিতে মেয়েদের নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান, language club, Debate club আয়োজন করতে গিয়ে অনেক অনেক মেয়ের সাথেই সখ্য গড়ে উঠেছে। তাদের মাঝে প্রায় সবাই প্রেমজনিত রোগে ভুগছে, তবে অনেকেই এই বিষ পান করেনি বলে আমার বিশ্বাস।

যাইহোক, প্রেমজনিত রোগে ভুগছেন যারা তাদের কয়েকজনের অদ্ভূত এক জীবনদর্শন আমাকে একই সাথে বিব্রত এবং চিন্তিত করেছে। এসব মেয়েদের মাঝে অনেকের পরিবার থেকেই জানে যে এরা একজন এর সাথে engaged, কিন্তু তবুও বাড়ি থেকে বিয়ের কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। কিন্তু এরা ঠিকই কক্সবাজার এ পিকনিক এ যাচ্ছে, অবৈধ মেলামেশা করছে! আবার এসব কিছুও তাদের পরিবার জানছে। আমি খুব কাছের একজনের কাছে জানতে চাইলাম, চার বছর ধরেই তো ভাই একই ভাবে চলছেন, বিয়ে করবেন কবে?? সে উত্তরে বলল, বাবা-মা এখনই রাজি না, অনার্স শেষ করেই বিয়ে দেবেন। আবার প্রশ্ন করলাম, বিয়ে হবে তো? নাকি…? সে বললো আরে বিয়ে তো হয়েই আছে, ও তো আমার বর। শুধু কালেমা পরাটাই বাকি এই আর কি (????)।

আর একজনের সাথে কথায় কথায় বিয়ের প্রসঙ্গ এলো, বলল সে তার খালাতো ভাই এর সাথে প্রেম করছে আজ প্রায় ৩ বছর। ওরা একসাথে বাড়ি যায়, এমনকি ওর পরিবার থেকে কড়া নির্দেশ, ওর সেই খালাতো ভাই ছাড়া যেন একা একা বাড়িতে না যায়। (?????????)

এরকম আরো অনেক মেয়ের কাছ থেকেই একইরকম উত্তর পেলাম, যারা নাকি অনেকদিন ধরেই প্রেমজনিত এই ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত।

অনেক ভেবে দেখলাম সমাজের এই সমস্যাটাই আমাদের দেশের মূল ভাঙ্গনের জন্য অনেকটাই দায়ী। আগে ছেলে মেয়েদের বিয়ে হত অল্প বয়সেই এবং সংসারের দায়িত্ব ঘারে এসে পড়ায় মানুষের মধ্যে এতো চরম নৈতিক বিপর্যয় ঘটেনি। এখন মেয়েদের তথাকথিত অধিকার প্রতিষ্ঠার নাম করে তাদের নিয়ে ব্যাবসা করা হচ্ছে। আর মা-বাবারাও এসব ফানুসের পেছনে নিজের সন্তানদের ছুটার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। বিয়ের মত বৈধ একটা সামাজিক কাজকে পায়ে দলে অবৈধ যৌন বাসনাকে উস্কে দেয়া হচ্ছে।
লাক্স ফটোজেনিক এ যে মেয়েগুলো অংশ নিচ্ছে, তাদের বাবা মায়ের কাছে খুব জানতে ইচ্ছা করে, তারা কি তাদের সন্তানের শরীর বিক্রি করা টাকা দিয়ে তাদের ভবিষ্যত জীবন কে সাজাতে চান??
যে চ্যানেল আই এই কুকাম সাধন করে যাচ্ছে বছরের পর বছর তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সমাজ নীরব কেন??

এবারে একটু গভীরে যাই,

ধরেন একটা মেয়ে আর একটা ছেলে, ২ জনই একি শহরে পড়ালেখা করছে, ২ জনই সেই প্রেমজনিত মহামারি রোগে আক্রান্ত। তারা ২ জনই ২ টা মেসে বা হোস্টেল এ থেকে পড়ালেখা করছে এবং তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, একে অপরকে ছাড়া বাঁচবেইনা (প্রলাপ আর কি)। এখন এই দুজন নাদান মানব মানবী কে যদি তাদের পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দিত, এবং তারা ২ টা ভিন্ন হোস্টেল না থেকে একটা রুমে থাকবে আর পাশাপাশি পড়ালেখা করবে। বাবা মা তারা আলাদা থাকলে যেই টাকা তাদের দিতেন সেই টাকাই পাঠাবেন। এরকম উদাহরণ আমাদের ভার্সিটিতে আমি দেখেছি। আমাদের বিতর্ক ক্লাবের এক মেয়ের কাছে জানতে পারলাম, তাদের পরিবার এ এখনও ছেলেমেয়েদের এভাবেই বিয়ে হচ্ছে। সেই মেয়েও বিবাহিত। তারা ২ জনই আমাদের ভার্সিটিতে পড়ছে। একটা রুম নিয়ে থাকছে। এতে ওদের নৈতিক অবক্ষয়ের একটা পথ বন্ধ হয়েছে। ওদের পরিবারের সবার এভাবেই বিয়ে হয় এবং সবাই উচ্চশিক্ষা নিতে দেশে বিদেশে যাচ্ছে। বিয়ে পড়ালেখায় কোনো প্রতিবন্ধক নয়। এটাকে সমাজ প্রতিবন্ধক হিসেবে উপস্থাপন করে অবৈধ যৌনাতেই বাহবা দিচ্ছে। টেলিভিশন নাটক সিনেমায় এমনভাবে এটাকে দেখানো হচ্ছে যে প্রেমটা যেন ঐশ্বরীক! বিয়ের আর দরকার কি?? তাদের কথা মত, "বিয়ে হয়নি তো কি হয়েছে? সে তো আমার বর"। (!!!!!!!!!!!!!!)

Boyfriend culture এর বেপরোয়া প্রচলন এর ফলে সমাজের কত অঘটন ঘটছে তা নিশ্চয়ই সবাই বুঝেন বোধ করি।

১। অবিশ্বাস (বিয়ের আগে যতটাই বিশ্বাস করছে, বিয়ের পর ঠিক ততটাই অবিশ্বাস)।
২। তালাক।
৩। নারী নির্যাতন।
৪। নৈতিক অবক্ষয়।
৫। অনেক ছেলেমেয়েই একাধিক প্রেম জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
৬। একে অপরের প্রতি সমাজিক শ্রদ্ধাবোধ এখন বিলুপ্তির পথে (ট্রেনে এক বৃদ্ধকে সিট ছেড়ে দেয়ায় সবার চোখে সেই মানুষটাকে এলিয়েন মনে হয়)।
৭। পারিবারিক অশান্তি।
৮। হতাশা।
৯। নেশা (প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে নেশা ধরেছে এমন ঘটনা এখন খুব সাধারণ)।
১০। খুন।
১১। পর্ণোগ্রাফি (প্রায়ই ইন্টারনেট এসব ঘটনা প্রকাশ পেয়ে যায়, অপ্রকাশিত ঘটনার কথা বাদই দিলাম, কিন্তু অনেক ঘটছে)।
১২। আত্মহত্যা।
১৩। ধর্ষণ।
১৪। লোভ (আমাদের ভার্সিটির এক মেয়ে সেমিস্টার ফি না দিয়ে তার বয় ফ্রেন্ড কে গিফ্‌ট কিনে দিল, সেমিস্টার ফাইনাল দিলনা। যখন বাবা জানলেন তখন সেই বাবার সে কি করুণ অবস্থা!!)।
১৫। পারিবারিক অশান্তি।

এভাবেই আরো অনেক সামাজিক সমস্যার সৃষ্টিকারী এই মহামারি ব্যাধি আমাদের সমাজকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আর পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার অভাবে, তাদের মস্তিস্কে গোবর সাপ্লাই করার মত অনেক উপাদান চাকচিক্যময় ভঙ্গিতে উপস্থাপন করছে। আর মিডিয়া এই সমস্যাকে সব থেকে বেশি উসকিয়ে দিচ্ছে। পোষাক সন্ত্রাস মেয়েদের রুচি বিকৃতিতে সব থেকে বেশি তৎপর।

বিদেশী সংস্কৃতির আদলে বাঙ্গালি মেয়েদের ইজ্জত আব্রু নিয়ে যা ইচ্ছে তাই ছিনিমিনি খেলা চলছে, আর আমরা তখন নীরব!!! যারা নিজেদের সমাজের কর্ণধার মনে করেন তাদের তখন ১০০০ ভোল্ট এর বাত্তি দিয়ে সার্চ করলেও খুঁজে পাওয়া যায়না!

কিন্তু এরাই আবার স্বাধীনতা, স্বাধীনতার চেতনা, দেশকে নিয়ে দুশ্চিন্তা(!!) এসব বুলি আওরাতে খুব পটু। যে চ্যানেল আই লাক্স ফটোজেনিক এর মত নোংড়ামি করতে পারে, তারাই আবার 'মাটি ও মানুষ' নিয়ে অনুষ্ঠান করে বাহবা কুড়ায়। আর আমাদের মত আতেলরা দেখেও না দেখার ভান করি। কেউ কেউ বলি, কি হচ্ছে হোক, আমি নিজে ভাল থাকলেই হল। দেশ আর সমাজের জন্য আমাদের তো কোন দায়িত্ববোধ থাকতে নেই(!!)। আমরা শুধু খাব দাব আর কলকলাবো। দেশে একটা দৈত্য এলো, ডিজুস জেনারেশন তৈরি হলো, এরা বেহায়া নাচ গানে মত্ত থাকবে, পার্টি করবে, ক্লাবে নাচবে। মেয়েরা পার্লারে কারি কারি টাকা উড়াবে নিজদেরকে নোংড়ামির জন্য পলিশ করবে আর রাস্তায় তার রুপ দেখে কেউ কমেন্ট করলে সেটা হবে যৌন হয়রানি কিংবা ইভটিজিং(!!)।

ধুর ছাই, এসব ভাবলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে...

................
সাদিয়া শিমু
২৮ জানুয়ারী, ২০১১।

No comments:

Post a Comment