হাসানের খালা ঈদের পর তাদের বাড়ি বেড়াতে এসে সকিনাকে বললেন , 'সকিনা, এবার হাসানের বিয়ের ব্যবস্থা কর।'
'আপা, আমিও কদিন ধরে এ কথাই ভাবছিলাম । ভাল পরিবারের একটি মেয়ের খবর-ও পেয়েছি । আপনি গিয়ে একদিন দেখে আসুন । '
'একদিন কেন? বলতো আজই যাই' , বলল খালা।
'এত তাড়াহুরার কি আছে! আমি বরং হাসানের মতটা জেনে নি আগে' ।
'হাসানের মত ? ওটা আমি-ই নিচ্ছি' ।.... 'হাসান'! খালা উচ্চস্বরে ডাকলেন, 'কোথায় গেলো পাজিটা' ?
'ও ওর আব্বা ভাইদের সাথে কাজী আবু জাফরের কাছে গেছে '।
খালা জ্বলে উঠ বললেন , 'আবার সেই বুড়োটা! উফ, বুড়োটা জ্বালিয়ে মারবে দেখছি'।
মায়মুনা হাসতে হাসতে বলল, 'কে খালাজান' ?
'কে আবার , কাজী আবু জাফর!'
কিছুক্ষণ পরই আব্দুল মুনিম পুত্রদের নিয়ে ফিরে এলেন । খালাজান হাসানকে ডেকে কোন ভূমিকা ছাড়াই জিজ্ঞেস করলেন, 'হাসান, এ মাসেই তোমার বিয়ে হবে । আমি সব ঠিকঠাক করছি , তুমি আবার অমত করে বসবে না তো ?'
হাসানকে চুপ থাকতে দেখে খালা বললেন, 'হুম বুঝেছি, কথায় বলে, নিরবতা সম্মতির লক্ষণ । ঠিক আছে তুমি যাও, আমি সব দেখছি । মায়মুনা! তুমি তৈরী হয়ে নাও । আমি এখন ই মেয়ে দেখতে যাবো । সকিনা, এবার বলো মেয়েটি কোন বাড়ির ?'
মায়মুনা ও তাহেরার চেহারায় খুশির ঝিলিক খেলছিলো !! তাই দেখে হাসান বলল,'খালাজান! আমার যে বিয়ে হয়ে গেছে !'
খালা চেঁচিয়ে বললেন, কি! কি বললে তুমি ?
খালাজান, আমি বলেছি, আমার বিয়ে হয়ে গেছে ।
কোথায় ? কখন ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা... খালাজান হতভম্ব হয়ে গেলেন ।
'বিয়ে তো করেছি সেই কবে ! আপনাকে কেউ কিছু বলেনি ?'
খালাজান দু:খিত কণ্ঠে বললেন, 'কি ব্যাপার সকিনা , এসব কি শুনছি ?'
সকিনা, মায়মুনা ও তাহেরা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে পরস্পরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো । তাই দেখে খালা বললেন , 'হাসান, বিয়ে করেছো ভালো কথা, কিন্তু গোপন করলে কেন ? আর কাউকে না হোক অন্তত আমাকে বলতে পারতে । যাক, এখন বলতো মেয়েটি কে ? তার নাম কি ? বাড়ি কোথায় ?
হাসান বলল, খালাজান! ও এক অপরূপা সুন্দরী। স্পেনে এমন মেয়ে আর দ্বিতীয়টি নেই। আপনি চাইলে তাকে যখন তখন দেখাতে পারি । দাড়ান, আমি এখনি নিয়ে আসছি তাকে ।
হাসান তার কামরা থেকে তরবারি হাতে ফিরে এসে বলল, দেখুন খালাজান! এই আমার জীবনসঙ্গীনি !
খালাজান বললেন, বুঝেছি, আবু জাফরের সঙ্গদোষে পেয়েছে তোকে । আল্লাহ, বুড়োটার যন্ত্রনা আর সহ্য হয়না । ওতে তোমার কাছে নিয়ে যাও ।
হাসান হাসতে হাসতে চলে গেলো একদিকে । খালা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ডাকলেন , হাসান এদিকে এসো ।
হাসান ফিরে এসে বললো, আরো কিছু বলবেন, খালাজান ?
বলবোনা মানে , তুমি তো আমার আসল প্রশ্নের ই জবাব দাওনি ।
হাসান গম্ভীর হয়ে বলল, আমি আপনার প্রতিটি প্রশ্নের ই জবাব দিয়েছি খালাজান । এখন এ নিয়ে আর কথা বলবেন না আশা করি ! '
*************************
'দরজা খুলে দাও, দরজা খুলে দাও!' বলতে বলতে হাসান পেছন থেকে ফটক রক্ষীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়লো ।
গ্রানাডার মুজাহিদ ইলিয়াস, দুজন মরক্কো সেনা ও চারজন আলমেরিয়া ও ভিগার মুজাহিদ হাসানের ডানে বামে পৌছে গেলো । তারা সারিবদ্ধভাবে আক্রমণ চালিয়ে শত্রুদেরকে ফটক থেকে হটিয়ে দিচ্ছিলো । কিন্তু এ সময় আঙিনা থেকে নতুন একদল শত্রুসেনা তরঙ্গের মত তাদের দিকে এগিয়ে এল । শত্রুদের দুটি বর্শা এক সাথে হাসানের বুকে আঘাত করলো । কাধে এসে পড়লো তরবারির আঘাত ! সাথে সাথে মাটিতে পড়ে গেলো ও । ইলিয়াস ও হাসানের সাথে আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো । খৃষ্টান সেনারা প্রবল বেগে অগ্রসর হয়ে পুনরায় ফটক আটকে দাড়াল ।
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দশজন মুজাহিদ আবার একত্রিত হয়ে ফটকের কাছে এলো । তারা আহমদ ও সঙ্গীদের নিয়ে দরজা খুলবার চেষ্টা করলো । কিন্তু খৃষ্টানরা প্রতিরোধের দেয়াল তুলে পাঁচজন মুজাহিদকে শহীদ করে দিলো । আহমদ ও তার সঙ্গীরা প্রতিরোধ অগ্রাহ্য করে আবার ফটক স্পর্শ করলো এবং ফটকের বড় লৌহদন্ডটি সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হলো । আহমদ ও তার সঙ্গীরা নারায়ে তকবীর ধ্বনিতে কেল্লা কাপিয়ে ফটকের পাল্লায় ধাক্কা দিলো । খুলে গেলো ফটক ! রাবাতের মুজাহিদরা প্রচন্ড ধ্বনি তুলে প্রবল ঝড়ের বেগে কেল্লায় প্রবেশ করলো । এদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্বয়ং আমীর ইউসুফ বিন তাশফিন ।
*************************
আব্দুল মুনিম ও হাসানের লাশ নিজ হাতে কবরে নামালেন আমীর ইউসুফ । হাসানের মুঠিতে তখনো তরবারির বাট । এক সিপাই তরবারিটি হাত থেকে খুলতে গেলে আহমদ কেঁদে বললো , ' না না , আমার ভাইয়ের অলঙ্কার ছিনিয়ে নিওনা । তরবারির চাইতে প্রিয় কিছুই তার ছিলো না । সে বলতো, তরবারির সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে ।'
হাসানকে তলোয়ার হাতে ধরা অবস্থাতেই দাফন করা হলো !
ইউসুফ বিন তাশফিন - (নসীম হিজাজী) : হিজরী পঞ্চম শতকে পতনোন্মুখ খন্ডবিখন্ড স্পেনের মুসলমানদের ওপর খৃষ্টান সম্রাট আলফানসুর আক্রমণের প্রতিরোধে আফ্রিকার মরক্কোর আমীর ইউসুফ বিন তাশফিনের জাল্লাকা ও হিসনুল্লায়েত কেল্লা বিজয়ের মাধমে স্পেনের মুসলমানদেরকে ফের বিজয়ী করার গল্প নিয়ে লেখা উপন্যাসের সবচেয়ে আবেগী গল্পাংশটুকু হলো হাসান!! সে গল্পের অন্য মূল দুই চরিত্র সা'দ ও আহমদের ছোট ভাই...
@ লেখক: স্বর্ণলতা, @ সোর্স লিঙ্ক
'আপা, আমিও কদিন ধরে এ কথাই ভাবছিলাম । ভাল পরিবারের একটি মেয়ের খবর-ও পেয়েছি । আপনি গিয়ে একদিন দেখে আসুন । '
'একদিন কেন? বলতো আজই যাই' , বলল খালা।
'এত তাড়াহুরার কি আছে! আমি বরং হাসানের মতটা জেনে নি আগে' ।
'হাসানের মত ? ওটা আমি-ই নিচ্ছি' ।.... 'হাসান'! খালা উচ্চস্বরে ডাকলেন, 'কোথায় গেলো পাজিটা' ?
'ও ওর আব্বা ভাইদের সাথে কাজী আবু জাফরের কাছে গেছে '।
খালা জ্বলে উঠ বললেন , 'আবার সেই বুড়োটা! উফ, বুড়োটা জ্বালিয়ে মারবে দেখছি'।
মায়মুনা হাসতে হাসতে বলল, 'কে খালাজান' ?
'কে আবার , কাজী আবু জাফর!'
কিছুক্ষণ পরই আব্দুল মুনিম পুত্রদের নিয়ে ফিরে এলেন । খালাজান হাসানকে ডেকে কোন ভূমিকা ছাড়াই জিজ্ঞেস করলেন, 'হাসান, এ মাসেই তোমার বিয়ে হবে । আমি সব ঠিকঠাক করছি , তুমি আবার অমত করে বসবে না তো ?'
হাসানকে চুপ থাকতে দেখে খালা বললেন, 'হুম বুঝেছি, কথায় বলে, নিরবতা সম্মতির লক্ষণ । ঠিক আছে তুমি যাও, আমি সব দেখছি । মায়মুনা! তুমি তৈরী হয়ে নাও । আমি এখন ই মেয়ে দেখতে যাবো । সকিনা, এবার বলো মেয়েটি কোন বাড়ির ?'
মায়মুনা ও তাহেরার চেহারায় খুশির ঝিলিক খেলছিলো !! তাই দেখে হাসান বলল,'খালাজান! আমার যে বিয়ে হয়ে গেছে !'
খালা চেঁচিয়ে বললেন, কি! কি বললে তুমি ?
খালাজান, আমি বলেছি, আমার বিয়ে হয়ে গেছে ।
কোথায় ? কখন ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা... খালাজান হতভম্ব হয়ে গেলেন ।
'বিয়ে তো করেছি সেই কবে ! আপনাকে কেউ কিছু বলেনি ?'
খালাজান দু:খিত কণ্ঠে বললেন, 'কি ব্যাপার সকিনা , এসব কি শুনছি ?'
সকিনা, মায়মুনা ও তাহেরা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে পরস্পরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো । তাই দেখে খালা বললেন , 'হাসান, বিয়ে করেছো ভালো কথা, কিন্তু গোপন করলে কেন ? আর কাউকে না হোক অন্তত আমাকে বলতে পারতে । যাক, এখন বলতো মেয়েটি কে ? তার নাম কি ? বাড়ি কোথায় ?
হাসান বলল, খালাজান! ও এক অপরূপা সুন্দরী। স্পেনে এমন মেয়ে আর দ্বিতীয়টি নেই। আপনি চাইলে তাকে যখন তখন দেখাতে পারি । দাড়ান, আমি এখনি নিয়ে আসছি তাকে ।
হাসান তার কামরা থেকে তরবারি হাতে ফিরে এসে বলল, দেখুন খালাজান! এই আমার জীবনসঙ্গীনি !
খালাজান বললেন, বুঝেছি, আবু জাফরের সঙ্গদোষে পেয়েছে তোকে । আল্লাহ, বুড়োটার যন্ত্রনা আর সহ্য হয়না । ওতে তোমার কাছে নিয়ে যাও ।
হাসান হাসতে হাসতে চলে গেলো একদিকে । খালা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ডাকলেন , হাসান এদিকে এসো ।
হাসান ফিরে এসে বললো, আরো কিছু বলবেন, খালাজান ?
বলবোনা মানে , তুমি তো আমার আসল প্রশ্নের ই জবাব দাওনি ।
হাসান গম্ভীর হয়ে বলল, আমি আপনার প্রতিটি প্রশ্নের ই জবাব দিয়েছি খালাজান । এখন এ নিয়ে আর কথা বলবেন না আশা করি ! '
*************************
'দরজা খুলে দাও, দরজা খুলে দাও!' বলতে বলতে হাসান পেছন থেকে ফটক রক্ষীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়লো ।
গ্রানাডার মুজাহিদ ইলিয়াস, দুজন মরক্কো সেনা ও চারজন আলমেরিয়া ও ভিগার মুজাহিদ হাসানের ডানে বামে পৌছে গেলো । তারা সারিবদ্ধভাবে আক্রমণ চালিয়ে শত্রুদেরকে ফটক থেকে হটিয়ে দিচ্ছিলো । কিন্তু এ সময় আঙিনা থেকে নতুন একদল শত্রুসেনা তরঙ্গের মত তাদের দিকে এগিয়ে এল । শত্রুদের দুটি বর্শা এক সাথে হাসানের বুকে আঘাত করলো । কাধে এসে পড়লো তরবারির আঘাত ! সাথে সাথে মাটিতে পড়ে গেলো ও । ইলিয়াস ও হাসানের সাথে আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো । খৃষ্টান সেনারা প্রবল বেগে অগ্রসর হয়ে পুনরায় ফটক আটকে দাড়াল ।
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দশজন মুজাহিদ আবার একত্রিত হয়ে ফটকের কাছে এলো । তারা আহমদ ও সঙ্গীদের নিয়ে দরজা খুলবার চেষ্টা করলো । কিন্তু খৃষ্টানরা প্রতিরোধের দেয়াল তুলে পাঁচজন মুজাহিদকে শহীদ করে দিলো । আহমদ ও তার সঙ্গীরা প্রতিরোধ অগ্রাহ্য করে আবার ফটক স্পর্শ করলো এবং ফটকের বড় লৌহদন্ডটি সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হলো । আহমদ ও তার সঙ্গীরা নারায়ে তকবীর ধ্বনিতে কেল্লা কাপিয়ে ফটকের পাল্লায় ধাক্কা দিলো । খুলে গেলো ফটক ! রাবাতের মুজাহিদরা প্রচন্ড ধ্বনি তুলে প্রবল ঝড়ের বেগে কেল্লায় প্রবেশ করলো । এদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্বয়ং আমীর ইউসুফ বিন তাশফিন ।
*************************
আব্দুল মুনিম ও হাসানের লাশ নিজ হাতে কবরে নামালেন আমীর ইউসুফ । হাসানের মুঠিতে তখনো তরবারির বাট । এক সিপাই তরবারিটি হাত থেকে খুলতে গেলে আহমদ কেঁদে বললো , ' না না , আমার ভাইয়ের অলঙ্কার ছিনিয়ে নিওনা । তরবারির চাইতে প্রিয় কিছুই তার ছিলো না । সে বলতো, তরবারির সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে ।'
হাসানকে তলোয়ার হাতে ধরা অবস্থাতেই দাফন করা হলো !
ইউসুফ বিন তাশফিন - (নসীম হিজাজী) : হিজরী পঞ্চম শতকে পতনোন্মুখ খন্ডবিখন্ড স্পেনের মুসলমানদের ওপর খৃষ্টান সম্রাট আলফানসুর আক্রমণের প্রতিরোধে আফ্রিকার মরক্কোর আমীর ইউসুফ বিন তাশফিনের জাল্লাকা ও হিসনুল্লায়েত কেল্লা বিজয়ের মাধমে স্পেনের মুসলমানদেরকে ফের বিজয়ী করার গল্প নিয়ে লেখা উপন্যাসের সবচেয়ে আবেগী গল্পাংশটুকু হলো হাসান!! সে গল্পের অন্য মূল দুই চরিত্র সা'দ ও আহমদের ছোট ভাই...
@ লেখক: স্বর্ণলতা, @ সোর্স লিঙ্ক
No comments:
Post a Comment