ফেব্রুয়ারি ২০১৩। শাহবাগের উন্মাদনায় উত্তাল দেশ। 'ধইরা ধইরা জবাই কর' স্লোগানে কাঁপছে ঢাকা শহর। আমি নিতান্তই ভাবলেষহীন মানুষ। ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়নি, হাতে অফুরন্ত সময়। ইসলামকে একমাত্র জীবনব্যস্থা হিসেবে স্বীকার করেছি বেশিদিন হয়নি। অনলাইনে ইসলাম নিয়ে টুকটাক লেখালেখিও শুরু করেছি। শাহবাগ নিয়ে একটা ধন্দে পড়ে গেলাম। একটা সেক্ট যারা শাহবাগের পক্ষে তারা আন্দোলনটাকে এমনভাবে গ্লোরিফাই করছে যেন তা স্বর্গীয় কোন ব্যাপার। আরেকটা সেক্ট প্রধানত জামাত-শিবিরের, তারা ব্যাপারটাকে টোটাল নষ্টামি ছাড়া কিছু দেখছে না। অবসর যেহেতু, সত্য অবলোকনের জন্য আমি অকুস্থলে উপস্থিত হলাম। একবার নয়, কয়েকদিন গিয়েছি শাহবাগে। কী ঘটে সেখানে, স্বচক্ষে দেখতে। বন্ধুমহলের প্রায় সবাই তখন শাহবাগের ঘোর সাপোর্টার। তাদেরকে দেখলাম সর্বোচ্চ শক্তি আর আবেগ খাটিয়ে স্লোগান দিচ্ছে। আমার পর্যবেক্ষণের অবজেক্ট অবশ্য ছিল ভিন্ন।
গাঁজাখাওয়া লাল চোখের দুর্গন্ধযুক্ত কাপড়ের কিছু পুরুষ-মহিলার কীর্তন আর যাত্রাপালার সাথে রাস্তার পাশে লেলিন, মার্কস, বার্টান্ড রাসেলদের নাস্তিকতা দর্শনের বই বিক্রি দেখে আমি আন্দোলনের উদ্দেশ্যটা চোখের সামনে দেখতে পেলাম। পাবলিক সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের বিরোধিতা করা, তাদের নিজস্ব দর্শন মানুষের মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া। জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবির সাথে সাথে 'ধর্মভিত্তিক রাজনীতি' নিষিদ্ধের দাবি তো এরই ফল। এতে গলা মেলাতে দেখলাম পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া সহপাঠীদের। আমি আর থাকতে পারলাম না। সত্য উন্মোচনের লক্ষ্যে শাহবাগের এই ভেতরের বিষয়গুলো নিয়ে বলতে শুরু করলাম। বন্ধুমহলে তখন আমার পরিচিতি "শিবির জুবায়ের" হিসেবে। মুখে দাড়ি, প্যান্ট টাখনুর ওপরে, শাহবাগের বিরুদ্ধে বলে-শিবির ছাড়া আর কী হতে পারে? এছাড়া আগেপরে কিছু 'বিশেষণ' তো আছেই। পুরনো বন্ধুদের অনেকের সাথেই দূরত্ব সৃষ্টি হল। এ ছিল অবশ্যাম্ভাবী। দুটো বিপরীত আদর্শের মানুষ একসাথে চলতে পারেনা। শাহবাগ কেবল সেই পার্থক্যটা স্পষ্ট করল। শাহবাগ ছিল সত্যিকার অর্থেই এক ফিল্টার। সেসময় অনেক মানুষের কাছে অনেক উপাধি পেয়েছি। আমাকে শিবির ট্যাগিয়ে শিবিরদের জবাই করার দৃঢ়তা আরোপ করা বন্ধু দেখেছি। অনেক কাছের মানুষ দূরে সরে গেছে। অনেকের অনেকরকম কথা শুনেছি, আচরণ দেখেছি। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে ধৈর্যধারণ করেছিলাম। তার ফল আজকে পাচ্ছি।
আজ, এই সেপ্টেম্বর ২০১৪ তে এসে ঐ মানুষগুলোর শাহবাগে দৃঢ়চিত্তে গলাফাটানো স্লোগানের দৃশ্য কল্পনা করলে মুখে একটু হাসি ফোটে। সে হাসির ত্রিশভাগ বিদ্রুপ, ত্রিশভাগ আশাবাদ আর চল্লিশভাগ করুণা। সেদিন যারা আমার মত শাহবাগবিরোধীদের ধুয়ে দিয়েছিল তারা আজ 'শাহবাগ' শব্দটা উচ্চারণ করতেও লজ্জা পায়। যুগে যুগে সত্যের কাছে মিথ্যা সর্বদাই পরাজিত হয়েছে, হয়েই যাবে। আল্লাহ্ আমাকে সেই কঠিন দিনগুলোতে সত্যমিথ্যার পার্থক্য করার সামর্থ্য দিয়েছিলেন, এর কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই। তবু যারা সত্যকে মেনে নেয়নি, তারা আজ যেমন অপমানিত হচ্ছে, তেমনি হয়ে যাবে চিরদিন। ইসলাম ব্যতীত অন্যকিছুর মধ্যে যে সমাধান খুঁজেছে, মুক্তি খুঁজেছে, সে তা কোনদিন পায়নি, পাবেও না। পেয়ে গেছে কেবল লাঞ্ছনা। ইতিহাস সাক্ষী।
"বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে, মিথ্যা তো দূরীভূত হবার জন্যই।" [বনী ইসরাঈলঃ ৮১]
গাঁজাখাওয়া লাল চোখের দুর্গন্ধযুক্ত কাপড়ের কিছু পুরুষ-মহিলার কীর্তন আর যাত্রাপালার সাথে রাস্তার পাশে লেলিন, মার্কস, বার্টান্ড রাসেলদের নাস্তিকতা দর্শনের বই বিক্রি দেখে আমি আন্দোলনের উদ্দেশ্যটা চোখের সামনে দেখতে পেলাম। পাবলিক সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের বিরোধিতা করা, তাদের নিজস্ব দর্শন মানুষের মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া। জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবির সাথে সাথে 'ধর্মভিত্তিক রাজনীতি' নিষিদ্ধের দাবি তো এরই ফল। এতে গলা মেলাতে দেখলাম পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া সহপাঠীদের। আমি আর থাকতে পারলাম না। সত্য উন্মোচনের লক্ষ্যে শাহবাগের এই ভেতরের বিষয়গুলো নিয়ে বলতে শুরু করলাম। বন্ধুমহলে তখন আমার পরিচিতি "শিবির জুবায়ের" হিসেবে। মুখে দাড়ি, প্যান্ট টাখনুর ওপরে, শাহবাগের বিরুদ্ধে বলে-শিবির ছাড়া আর কী হতে পারে? এছাড়া আগেপরে কিছু 'বিশেষণ' তো আছেই। পুরনো বন্ধুদের অনেকের সাথেই দূরত্ব সৃষ্টি হল। এ ছিল অবশ্যাম্ভাবী। দুটো বিপরীত আদর্শের মানুষ একসাথে চলতে পারেনা। শাহবাগ কেবল সেই পার্থক্যটা স্পষ্ট করল। শাহবাগ ছিল সত্যিকার অর্থেই এক ফিল্টার। সেসময় অনেক মানুষের কাছে অনেক উপাধি পেয়েছি। আমাকে শিবির ট্যাগিয়ে শিবিরদের জবাই করার দৃঢ়তা আরোপ করা বন্ধু দেখেছি। অনেক কাছের মানুষ দূরে সরে গেছে। অনেকের অনেকরকম কথা শুনেছি, আচরণ দেখেছি। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে ধৈর্যধারণ করেছিলাম। তার ফল আজকে পাচ্ছি।
আজ, এই সেপ্টেম্বর ২০১৪ তে এসে ঐ মানুষগুলোর শাহবাগে দৃঢ়চিত্তে গলাফাটানো স্লোগানের দৃশ্য কল্পনা করলে মুখে একটু হাসি ফোটে। সে হাসির ত্রিশভাগ বিদ্রুপ, ত্রিশভাগ আশাবাদ আর চল্লিশভাগ করুণা। সেদিন যারা আমার মত শাহবাগবিরোধীদের ধুয়ে দিয়েছিল তারা আজ 'শাহবাগ' শব্দটা উচ্চারণ করতেও লজ্জা পায়। যুগে যুগে সত্যের কাছে মিথ্যা সর্বদাই পরাজিত হয়েছে, হয়েই যাবে। আল্লাহ্ আমাকে সেই কঠিন দিনগুলোতে সত্যমিথ্যার পার্থক্য করার সামর্থ্য দিয়েছিলেন, এর কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই। তবু যারা সত্যকে মেনে নেয়নি, তারা আজ যেমন অপমানিত হচ্ছে, তেমনি হয়ে যাবে চিরদিন। ইসলাম ব্যতীত অন্যকিছুর মধ্যে যে সমাধান খুঁজেছে, মুক্তি খুঁজেছে, সে তা কোনদিন পায়নি, পাবেও না। পেয়ে গেছে কেবল লাঞ্ছনা। ইতিহাস সাক্ষী।
"বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে, মিথ্যা তো দূরীভূত হবার জন্যই।" [বনী ইসরাঈলঃ ৮১]
-- জুবায়ের হোসেন
No comments:
Post a Comment