উড়ুক্কু মাছ আমার খুব প্রিয় এক খাবার। সেন্ট মারটিনের অলি গলিতে এই হালকা নীলচে মাছ খুঁজে বেড়িয়েছি আমি আর ও...তারপর নিজেরা বেছে বেছে পছন্দ করে গরম গরম ফ্রাই খাওয়া। উড়ুক্কু মাছ ধরার কায়দা নাকি অভিনব...বোকা টাইপের এই মাছগুলা নাকি নৌকার আলো দেখলেই উড়ে উড়ে চলে আসে। সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ্র কি ক্বাদর। বড়শি, ছিপ, জাল ছাড়াই রিযিক যদি হাতের মাঝে ধরা দেয় তাহলে সেটা আল্লাহ্র নিয়ামাত ছাড়া আর কি। এমনই নিখুঁত তার সৃষ্টি। উড়ুক্কু মাছ চলবে নিজ গতিতে, আর মানুষ মানুষের। আশ্চর্যের বিষয় যে, আশরাফুল মাখালুকাত এই আমরাও উড়ুক্কু মাছ হতে বিশেষ আগ্রহী। যেদিকেই আলো দেখি, সেদিকেই উড়ে উড়ে চলে যাই।
আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপের সময়কার ফ্ল্যাশ মবের ট্রেন্ড দেখে আমি যারপরনাই হতবাক হয়েছিলাম। বিষয়টা কি জানার জন্য যখন নিউসফিডের কিছু ভিডিও ছাড়লাম, এক অজানা লজ্জায় কোনটাই দেখতে পারি নি। কল্পনাতেও ছিল না আমার যে কোন মুসলিম দেশের ছেলেমেয়েরা এমন বেহায়াপনায় অংশগ্রহণ করবে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত এই ছেলেমেয়েগুলো ফ্ল্যাশ মবের পর বাসায় গিয়ে সদ্য নামাজ থেকে উঠে আসা মমতাময়ী মাকে বলেছে, 'আম্মু, যা চরম পারফর্মেন্স করলাম না আমরা, রাস্তায় পুরা ভিড় লেগে গেসিল। সেইরকম হইসে। জারিফটা একটা স্টেপ ভুল করসে, কিন্তু ভিডিওতে এডিট করে নিব।' মা তখন হয়ত উড়ুক্কু মাছ সিনড্রোমে ভেসে (উড়ে) গিয়ে বলেছে, 'তাই? দেখাস তো!' এরকমই আমরা! ওকে বললাম, 'আচ্ছা, আমরা যদি এই সময়ে বাংলাদেশে থাকতাম আর রিকশা করে যেতে যেতে আচমকা এক ফ্ল্যাশ মবের মাঝে পড়ে যেতাম, তাইলে কি করতা?' ও সব দাঁত বের করে বলল, 'রিকশার উপর দাঁড়ায় জোরসে এক আযান!' বিপদের সময় আযান দেয়া ছাড়া আর কি করার আছে! আজকাল সব বিয়েতে প্রফেশনাল ফটোসেশান হয়, গায়ে হলুদ ছেলে মেয়ে একসাথে। হবু বধূর কোমরে হাত দিয়ে হবু বরের ছবি, বা হবু বর হাঁটু গেড়ে প্রপসাল দিচ্ছে জীবন সঙ্গিনীকে- এসব পোয কোথা থেকে আবিষ্কৃত তার মালুম নাই, কিন্তু পাশে বসা দাড়িওয়ালা বাবা আর মাথায় কাপড় দেয়া মায়ের বোকা বোকা হাসি দেখে বুঝতে পারি যে জাতি উড়ুক্কু মাছ হিসেবে পুরোপুরি সফল। কোন এক টেলি কোম্পানি কুরবানির পশুর সাথে সেলফি তুললে পুরস্কারের আয়োজন করল, আমরা উড়ে উড়ে গরুর গলা আর ল্যাজ ধরে ঝুলে পড়লাম। আমি খানিকটা নিশ্চিত যে তারা যদি পরের বছর সেলফির বদলে নিজের গায়ে ছাগলের মুখ ট্যাটু করার চ্যালেঞ্জ দেয়, তারপরেও কেউ পিছপা হবে না, ছেলেরা তো নাইই, মেয়েরাও না। খুব জলদি হয়ত আমরা বেহায়াপনার এভারেস্ট জয় করব। গর্ভবতীদের নয় মাসের বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি ফেসবুকের এ্যালবামে দেখা যাবে- অমুক 'মায়ের ভেতর জীবন' নামের প্রফেশনাল কোম্পানির তোলা। হিড়িক পড়ে যাবে তখন- স্ত্রীর পেটে হাত রেখে স্বামীর ছবি, স্ত্রীর পাশে পেট ফুলিয়ে দাড়িয়ে স্বামীর দুষ্টুমির ছবি ইত্যাদি। গর্ভবতী মেয়ের মা লজ্জা লজ্জা মুখ করে পাশের বাড়ির ভাবীকে বলবে, 'আজকারকার ছেলেমেয়েরা, বুঝেনই তো।আর আমার মেয়ে জামাই যে শৌখিন।' ছেলেদের প্যান্ট নামতে নামতে গোড়ালিতে নেমে যাবে, আবার চাপা হতে হতে আমাদের দেশের মানিক ছেলেগুলোর দম বন্ধ, পা বন্ধ হয়ে আসবে। মেয়েরা কখনো টাখনুর উপর টাইটস পড়বে, কখনো আলিফ লায়লা পায়জামা। কিছুদিন পর মহান ভারতের পদাঙ্ক অনুসরন করে আমরা rally করব প্রকাশ্যে চুমু খাবার অধিকারের জন্য, কিন্তু নিরবে ঘরের কোনায় তাহাজ্জুদ পড়লে সে বিরাট নিন্দনীয় ব্যাপার। 'তুমি আবার ওদের সাথে মিশতে যেও না! কোন বই টই দিলে নিবা না।' মমতাময়ী মায়ের শাসানী। হেদায়েত পাবার পর হিজাবের কারনে ভার্সিটিতে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি-কেউ জোর করেছে কিনা, হুট করে বিয়ে হয়ে গেল কিনা কোন হুজুরের সাথে, নাকি কোন পলিটিকাল দলে যোগ দিলাম। কিন্তু সারা বছর বোরখা পড়া মেয়েগুলো যখন প্রেসেন্টেশনের সময় হিজাব খুলে শাড়ি আর খোলা চুলে চলে আসলো দুই নম্বর বেশী পাবার আশায়, তখন কেউ কোন প্রশ্ন করল না। তাদের এই উন্নতিতে জাতি যারপরনাই খুশী তখন। অতএব উন্নতির জোয়ারে উড়ুক্কু মাছরা উড়ে উড়ে চলে যাবে ...আর আমরা চুনোপুঁটিরা কাঁদার মাঝে খাবি খেতে খেতে হতাশ হয়ে উড়ুক্কু মাছের উড়া দেখতেই থাকব...দেখতেই থাকব
-- নাবিলা নোশীন সেজুতি
আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপের সময়কার ফ্ল্যাশ মবের ট্রেন্ড দেখে আমি যারপরনাই হতবাক হয়েছিলাম। বিষয়টা কি জানার জন্য যখন নিউসফিডের কিছু ভিডিও ছাড়লাম, এক অজানা লজ্জায় কোনটাই দেখতে পারি নি। কল্পনাতেও ছিল না আমার যে কোন মুসলিম দেশের ছেলেমেয়েরা এমন বেহায়াপনায় অংশগ্রহণ করবে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত এই ছেলেমেয়েগুলো ফ্ল্যাশ মবের পর বাসায় গিয়ে সদ্য নামাজ থেকে উঠে আসা মমতাময়ী মাকে বলেছে, 'আম্মু, যা চরম পারফর্মেন্স করলাম না আমরা, রাস্তায় পুরা ভিড় লেগে গেসিল। সেইরকম হইসে। জারিফটা একটা স্টেপ ভুল করসে, কিন্তু ভিডিওতে এডিট করে নিব।' মা তখন হয়ত উড়ুক্কু মাছ সিনড্রোমে ভেসে (উড়ে) গিয়ে বলেছে, 'তাই? দেখাস তো!' এরকমই আমরা! ওকে বললাম, 'আচ্ছা, আমরা যদি এই সময়ে বাংলাদেশে থাকতাম আর রিকশা করে যেতে যেতে আচমকা এক ফ্ল্যাশ মবের মাঝে পড়ে যেতাম, তাইলে কি করতা?' ও সব দাঁত বের করে বলল, 'রিকশার উপর দাঁড়ায় জোরসে এক আযান!' বিপদের সময় আযান দেয়া ছাড়া আর কি করার আছে! আজকাল সব বিয়েতে প্রফেশনাল ফটোসেশান হয়, গায়ে হলুদ ছেলে মেয়ে একসাথে। হবু বধূর কোমরে হাত দিয়ে হবু বরের ছবি, বা হবু বর হাঁটু গেড়ে প্রপসাল দিচ্ছে জীবন সঙ্গিনীকে- এসব পোয কোথা থেকে আবিষ্কৃত তার মালুম নাই, কিন্তু পাশে বসা দাড়িওয়ালা বাবা আর মাথায় কাপড় দেয়া মায়ের বোকা বোকা হাসি দেখে বুঝতে পারি যে জাতি উড়ুক্কু মাছ হিসেবে পুরোপুরি সফল। কোন এক টেলি কোম্পানি কুরবানির পশুর সাথে সেলফি তুললে পুরস্কারের আয়োজন করল, আমরা উড়ে উড়ে গরুর গলা আর ল্যাজ ধরে ঝুলে পড়লাম। আমি খানিকটা নিশ্চিত যে তারা যদি পরের বছর সেলফির বদলে নিজের গায়ে ছাগলের মুখ ট্যাটু করার চ্যালেঞ্জ দেয়, তারপরেও কেউ পিছপা হবে না, ছেলেরা তো নাইই, মেয়েরাও না। খুব জলদি হয়ত আমরা বেহায়াপনার এভারেস্ট জয় করব। গর্ভবতীদের নয় মাসের বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি ফেসবুকের এ্যালবামে দেখা যাবে- অমুক 'মায়ের ভেতর জীবন' নামের প্রফেশনাল কোম্পানির তোলা। হিড়িক পড়ে যাবে তখন- স্ত্রীর পেটে হাত রেখে স্বামীর ছবি, স্ত্রীর পাশে পেট ফুলিয়ে দাড়িয়ে স্বামীর দুষ্টুমির ছবি ইত্যাদি। গর্ভবতী মেয়ের মা লজ্জা লজ্জা মুখ করে পাশের বাড়ির ভাবীকে বলবে, 'আজকারকার ছেলেমেয়েরা, বুঝেনই তো।আর আমার মেয়ে জামাই যে শৌখিন।' ছেলেদের প্যান্ট নামতে নামতে গোড়ালিতে নেমে যাবে, আবার চাপা হতে হতে আমাদের দেশের মানিক ছেলেগুলোর দম বন্ধ, পা বন্ধ হয়ে আসবে। মেয়েরা কখনো টাখনুর উপর টাইটস পড়বে, কখনো আলিফ লায়লা পায়জামা। কিছুদিন পর মহান ভারতের পদাঙ্ক অনুসরন করে আমরা rally করব প্রকাশ্যে চুমু খাবার অধিকারের জন্য, কিন্তু নিরবে ঘরের কোনায় তাহাজ্জুদ পড়লে সে বিরাট নিন্দনীয় ব্যাপার। 'তুমি আবার ওদের সাথে মিশতে যেও না! কোন বই টই দিলে নিবা না।' মমতাময়ী মায়ের শাসানী। হেদায়েত পাবার পর হিজাবের কারনে ভার্সিটিতে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি-কেউ জোর করেছে কিনা, হুট করে বিয়ে হয়ে গেল কিনা কোন হুজুরের সাথে, নাকি কোন পলিটিকাল দলে যোগ দিলাম। কিন্তু সারা বছর বোরখা পড়া মেয়েগুলো যখন প্রেসেন্টেশনের সময় হিজাব খুলে শাড়ি আর খোলা চুলে চলে আসলো দুই নম্বর বেশী পাবার আশায়, তখন কেউ কোন প্রশ্ন করল না। তাদের এই উন্নতিতে জাতি যারপরনাই খুশী তখন। অতএব উন্নতির জোয়ারে উড়ুক্কু মাছরা উড়ে উড়ে চলে যাবে ...আর আমরা চুনোপুঁটিরা কাঁদার মাঝে খাবি খেতে খেতে হতাশ হয়ে উড়ুক্কু মাছের উড়া দেখতেই থাকব...দেখতেই থাকব
-- নাবিলা নোশীন সেজুতি
No comments:
Post a Comment