মুচি থেকে প্রেসিডেন্ট

দরজায় হেলান দিয়ে কাঁদছেন ২৫ বছরের অসহায় এক যুবক। ১৯৭১ সাল। তাঁর সামনে নিথর পড়ে আছে লক্ষ্মী বউয়ের লাশ। আট মাসের বাচ্চা পেটে ছিল বউটির। না, ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। যুবকটি ব্রাজিলের। হেপাটাইটিসের চিকিৎসার অভাবে ঘরের লক্ষ্মীর অকালমৃত্যু। অপরাধবোধের ঘোর অন্ধকার ছেয়ে ফেলে তাঁকে। জেদ চাপে মনে, একদিন অনেক বড় হবেন, যেদিন এভাবে কাউকে অর্থের অভাবে মরতে হবে না। বেছে নিলেন রাজনীতির পথ। তিনি আজ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা! সম্প্রতি টাইম সাময়িকীর বর্ষসেরা শত মনীষীর তালিকায় শীর্ষনেতা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।


জন্ম ১৯৪৫ সালে। বয়সের ঘর থেকে মুছে গেছে তাঁর ৬৪টি বছর। কিন্তু মুছে যায়নি শৈশব-কৈশোরের কষ্টের স্মৃতিগুলো। তিনি প্রথম পড়তে শেখেন ১০ বছর বয়সে। এরপর চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সাত বছর বয়সে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর সংসারের আয়রোজগারের দায়িত্ব পড়ে তাঁর ওপর। বন্ধুরা যখন স্কুলে, ১৪ বছরের কিশোর লুলা দা সিলভা তখন রাস্তার মোড়ে বসে আছে রং-পলিশ নিয়ে। কী কাজ তাঁর? পথচারীর জুতা পলিশ। আজকের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা সেদিন ছিলেন রাস্তার মুচি! কিন্তু এই কাজে কত আর আসে? তাতে তো আর সংসার চলে না। কাজ নিলেন লেদ ফ্যাক্টরিতে। একদিন কাজ করতে গিয়ে তাঁর বাঁ হাতের কড়ে আঙুলের অর্ধেকাংশ কেটে গেল। কাটা আঙুল নিয়ে দৌড়ে গেলেন আশপাশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য। ঝরঝর করে রক্ত ঝরছে। কিন্তু সামান্য শ্রমিকের কথা কে শোনে! বিনা পয়সায় তো আর চিকিৎসা হয় না! এই ঘটনা তাঁকে প্রচণ্ড রকম নাড়া দেয়। তাঁর ইচ্ছে হলো, শ্রমিকদের নিয়ে একটা সংঘ গড়ে তুলবেন। এই ইচ্ছেটাই শেষে জেদে পরিণত হয়, যখন বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন তাঁর স্ত্রী মারিয়া। এরপর বড় ভাইয়ের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ২৭ অক্টোবর, ২০০২। সেদিন তাঁর ৫৭তম জন্মদিন। চারদিকে আনন্দ-আড্ডার আয়োজন। হাজার হাজার মানুষের শুভকামনায় সিক্ত তিনি। না, জন্মদিনের আয়োজন বা শুভকামনা নয়, তিনি নির্বাচিত হয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট! ২০০৬ সালে তিনি দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আর সে জন্যই টাইম সাময়িকী তাঁকে নির্বাচন করেছে ২০১০ সালের সেরা রাজনৈতিক নেতা হিসেবে। একজন সাধারণ মুচি থেকে মহানেতা! নিশ্চয়ই লুলা দা সিলভা বিশ্বের সব তরুণের এক আদর্শ অনুপ্রেরণা হয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।


সংগ্রহ করা হয়েছে :: প্রথম আলো থেকে

No comments:

Post a Comment