কাহিনীসংক্ষেপ: দাস্তানে মুজাহিদ - নসীম হিজাযী

আরো যে নামে প্রকাশ হয়েছে বাংলায়: মরণজয়ী
উর্দু নাম: দাস্তানে মুজাহিদ

* * * * *
জাতির দরদী বন্ধু উপমহাদেশের কিংবদন্তীতুল্য ইতিহাস-সচেতন ঔপন্যাসিক নসীম হিজাযী বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে এখন অতি পরিচিত এভং প্রিয় একটি নাম। পাকিস্তানের উর্দু বাষার এ লেখকের জন্ম ১৯১৪ এবং মৃত্যু মার্চ ১৯৯৬ সালে। মুসলিম দুনিয়ায় যে স্বল্পসংখ্যক লেখক ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনায় সার্থক কলম-সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছেন নসীম হিজাযী তাঁদের শীর্ষস্থাণীয়। বলা যায়, সাহিত্যের এ মাধ্যমে তাঁর সমকক্ষ তিনি নিজেই। তাঁর লেখায় মুসলমানদের অতীত শৌর্য-বীর্য ,জয়-পরাজয়ের ইতিহাসই কেবল প্রাণবন্ত হয়ে উঠে না; বরং পাঠককে করে তোলে ঈমানে বলে বলীয়ান এবং এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সৃষ্টির স্বপ্নে উদ্দীপ্ত ।ফলে তাঁর রচনা-সম্ভার অনেক ভাষায়ই অনূদিত হয়ে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে এবং আমাদের বাংলা ভাষায়ও। 

সাহিত্যকে বলা হয় জীবনের প্রতিচ্ছবি। আর ইতিহাস হচ্ছে কাল ও জাতির দর্পন। এ দর্পনের দৃশ্যমান বিভিন্ন সময়ের ঘটনা বিশ্লেষণ করে জাতি তার আত্নপরিচয়ের সৌভাগ্য লাভের পাশাপাশি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার পাথেয় যোগাড় করতে পারে। সাহিত্যের একটি ব মাধ্যম হচ্ছে উপন্যাস। সাহিত্যের এ বৃহত্তর ক্যানভাসে কাল ও জীবনের ছবি ওঠে আসে অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে। এক্ষেত্রে সামাজিক উপন্যাস যেমন পাঠককে সমাজ-সচেতন করে তোলে, তেমনি ঐতিহাসিক উপন্যাস পাঠককে করে তোলে ইতিহাস-সচেতন। আর ইতিহাস-সচেতন মানুষই কেবল বদলে দিতে পারে অশান্ত ও পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত পৃথিবীর চেহারা। 

পূ্র্বেই উল্লেখ করেছি, নসীম হিজাযীর প্রায় সব উপন্যাসিই বিভিন্ন সময় বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। একই উপন্যাস একাধিক ব্যক্তিও অনুবাদ করেছেন। ফলে লাভ হয়েছে, পাঠক সবচে' মার্জিত ও পরিশীলিত অনুবাদটি বেছে নিতে পারছেন। তাছাড়া বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সর্বত্র সবসময় নসীম হিজাযীরসব বই নাগালের মধ্যে পাওয়া যায় না। জাতির মানস গঠনে এ উপন্যাসগুলোর গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে এবং উপন্যাসগুলোর গুরুত্বের কথা বিবেচনাকরে এবং উপন্যাসগুলো যাতে সবসময় পাঠকের সহজলভ্য করে রাখা যায় সে লক্ষ্যেই আমরাও এসবের অনুবাদ, প্রকাশ ও বিপণনে অংশীদার হয়েছি। মহান আল্লাহ তায়ালা লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন । আমীন!

thanks to: সমর ইসলাম পরিচালক (সার্বিক), বইঘর
http://www.rokomari.com/book/39485

কাহিনীসংক্ষেপ: লৌহ মানব - নসীম হিজাযী

ইতিহাস জাতির দর্পণ। মেরুদণ্ড সম্পন্ন জাতি সত্ত্বাকে ভঙ্গুর করে দিতে পারে ইতিহাসের বড় নির্দয়-নিষ্ঠুর ছড়ি। মেরুদণ্ডহীন জাতিসত্ত্বাকে পুনঃস্থাপনের জন্য চাই নির্মল-নিস্কলুষ জাতিস্বত্ত্বার ইতিহাস। মজার বিষয় এই যে, আমাদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। পৃথিবীর সবখানেই আমরা বিজয়ী ঘোড়া দাবড়িয়েছি এক সময়। পিরেনিজের সুউচ্চ পর্বতমালা থেকে রোম সাগরের উত্তাল উর্মি মালা একসময় ধন্য হয়েছে এ জাতির বিজয়ী ঘোড়ার পা চুম্বনে। রোম-ইরানের দম্ভের সুইচ্চ কেঁপে ওঠেছে জাতির দৃঢ় ইচ্ছার সম্মুখে। আরল, জাইহুন, নিশাপুর থেকে সুবশাল ভারতের ভূ-ভাগও বাদ যায়নি এ থেকে। হিমালয়ের আকাশচুম্বি উত্থানের মত অতিউচু আমাদের উপখ্যান । ভারত মহাসাগরের ঢেউ ঝুঁটি আজো গেয়ে চলেছে আমাদের যশোগাথা। সিন্ধু, মালাবার, নিরূন, তরাইন কালের সাক্ষী হয়ে আছে। আমাদের স্বর্ণালী ঐতিহ্য আমরা হারিয়েছি নিজের দোষেই। ভঙ্গুর সেই সত্ত্বাকে বলীয়ান করতে দরকার আজ কিছু মর্দে মুমিন সিংহ -সার্দুল পালোয়ান। দরকার কিছু মুহাম্মদ ঘুরী, আইবেক ও হাম্মদের মত দুঃসাহসিক যোদ্ধ। জাতি তাকিয়ে আছে কবে আসবে আবার সেই সুদিন? কবে আবার তরাইনের রণাঙ্গনে তালোয়ারের ঝংকার ওঠবে? যুগের পৃথ্বিরাজদের প্রমোদমহলে কারা কাঁপন ধরাবে? আছে কি এমন অমিত তেজা কোন ঘুরী কিংবা আইবেক? থাকলে তারা কৈ? কোথায়??

http://www.rokomari.com/book/69890

কাহিনীসংক্ষেপ: শেষ প্রান্তর - নসীম হিজাযী

উর্দু নাম: আখেরি চটান

গোবী মরুভূমির দূরন্ত মরুচারী তেমুজিন! ইতিহাসে তার পরিচিত চেংগিস খান! তার নেতৃত্বে মঙ্গোলিয়ার বর্বর বাহিনী জেগে উঠলো দূরন্ত ঝড়ের মত, সভ্যতার দীপশিখা নিভিয়ে দিতে লাগলো একটি একটি করে। ছয়শ' বছর আগে আরব মরু থেকে উঠে এসেছিলো যে মেঘছায়া, তা মানবতার উপর বর্ষন করেছিলো রহমতের বারিধারা। আর ছয়'শ বছর পর গোবীর মরু বুক থেকে উঠলো যে দূরন্ত ধূলিঝড়, তা থেকে বারিবর্ষণ হলোনা। হলো অগ্নিগিরির ধূম উদগীরণ, হলো উত্তপ্ত লাভার উদ্গীরণ! 


সভ্য জগতের কাছে চেংগিস খানের কৌশল ছিলো সম্পূর্ণ নতুন। তাতারদের বিষ্ময়কর সাফল্যের মূলে ছিলো তাদের দূরন্ত গতি! ঘোড়ার নাঙ্গা পিঠের ওপর সওয়ার হয়ে তারা ছুটে বেড়াতো, প্রত্যেকের সাথে থাকতো কয়েকটি করে ঘোড়া, একটি ক্লান্ত হলে অন্যটায় চড়ে বসতো, ক্ষুধা ও পিপাসার জন্যও ওই ঘোড়াই তাদের জন্য ছিলো যথেষ্ট। যেকোন অভিযানে তাদের সাথে থাকতো খুবই সামান্য রসদ! 

আব্বাসীয় খলীফাদের ঘুমে ঢুলুঢুলু অসতর্কতা আর অবিশ্বাস- কোন্দলের জামানায় এলো এ তাতারি গজব! বাগদাদের বিতর্কসভার আলেম ওলামাদের আরাম-আলস্যের আমোদে আচানক প্রচন্ড রোষে হামলে পড়লো দুর্দান্ত মোঙ্গল তাতারীরা। তছনছ করে দিলো তখনকার স্বপ্ন সাধের সাজানো বাগদাদ... 

তবে, ইতিহাসের এই চূড়ান্ত ক্রান্তিলগ্নেও আল্লাহর এক বান্দা বাগদাদের প্রান্ত থেকে শুরু করে ভারতীয় উপমহাদেশের অভ্যন্তর পর্যন্ত তাতারীদের সয়লাব রুখে দাঁড়ালেন। তিনি মুর্খ খারেজম শাহের দূরদর্শী বিজ্ঞ পূত্র, যুগের দুরন্ত মুজাহিদ, সত্যিকারের ঈমানদার জালালউদ্দিন! 

চেঙ্গিস খান হালাকু খানদের বর্বরতার প্রতাপের পাশেই সমুজ্জ্বল বীরত্ব ও শাহাদাতের তামান্নায় সর্বস্ব কুরবানী করে ময়দানে ময়দানে বিজয়ের বার্তা বয়ে আনা জালালউদ্দিনের প্রতিরোধের ইতিহাসকে কেন্দ্র করেই শেষ প্রান্তরের গল্প।

# লেখার উৎস: http://www.rokomari.com/review/3985

সুন্দরী মেয়েটা ছেলেটার পায়ে ধরে বসে পড়লো মাটিতে

সুন্দরী মেয়েটা ছেলেটার পায়ে ধরে বসে পড়লো মাটিতে- প্লিজ তুমি আমাকে বিয়ে করো, নাহলে আমার বিষ খাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা।

সোহরাওয়ারদি উদ্যানের আপামর জনতা বসে বসে মজা লুটছিল। আর মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাওয়ার দশা। ছেলেটাও দেখতে সিগারেট খোর ঠেকছে। পাবলিক ভাবছে- কোন কপালে এই সুন্দরী এই ছেলেকে ভালো বেসেছিল।


যুগটাই আসলে এমন। ভালোবাসা নামক সম্পর্কগুলো এখন খুব সস্তা, যত্রতত্র প্রথম দেখা, মিষ্টি হাসি দেখেই ভালোবাসা তৈরি হয়। যদিও পরে মানসিকতার দ্বন্দ্ব, সামাজিক , পারিবারিক প্রেক্ষাপটের অশান্তি, অর্থনৈতিক সমস্যায় ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়। আর বিয়ের আগে সব উজাড় করে দেওয়া নারী সম্প্রদায় ও জানে না আদৌ সে ছেলেটির সাথেই সংসার পাততে পারবে কিনা, কিংবা এই ছেলেটাই পরে তাকে গ্রহন করবে কিনা।


শুধু পার্কেই নয়, সুফিয়া কামাল হলের সামনেও উচ্চ শিক্ষিত মেয়েদেরও এই ধরনের অকাল কুষ্মাণ্ডদের সামনে দাড়িয়ে অরণ্যে রোদন করতে দেখেছি। অবাক লেগেছে। কিন্তু , বাস্তবতা এটাই যে, শিক্ষিত অশিক্ষিত সব নির্বিশেষে মেয়েরা এখনো এক যায়গায়ই দাড়িয়ে আছে। তা হলো নিজের সম্মান বা মর্যাদাকে নিজেরাই ভুলন্থিত করে । শুধু ছেলেদের শ্রেণী ভেদ কিংবা সামাজিক মর্যাদা এক্ষেত্রে হয়তো পার্থক্য করে।
তাই এই ধরনের সাময়িক সম্পর্কগুলো থেকে মেয়েরা আসলে নিজেদের প্রাপ্য মর্যাদা এবং অধিকারই বঞ্চিত হয়, এবং হয়ে আসছে অনাদি কাল থেকেই।


নিকাহ আরবি শব্দ এর একটা অর্থ হয় ইহসান করা, আরেকটা অর্থ হয় সুরক্ষিত দুর্গ নির্মাণ। বিয়ে সেই দুর্গ বলেই হয়তো ইসলামে বিয়ের আরবি প্রতি শব্দটা নিকাহ। আর এই ইহসান থেকেই সূচনা হয় অধিকারবোধ এবং অধিকার আদায়ের।

আর যে সম্পর্কে ইহসান নয়, সামাজিক সম্মান নয়, শুধু নারী দেহ ভোগই মুখ্য, সেই সম্পর্কে অধিকার বোধ আসার প্রশ্নই আসেনা।


আর ম্যানেজম্যান্টের ভাষায় বললে- ডিমান্ড সাইড যতো শক্তিশালী হয়, সাপ্লাই সাইড সেই অনুযায়ী সাপ্লাই করতে বাধ্য হয়। পুরোটা না দিতে না পারলেও কিছু তো দেওয়ার চেষ্টা করবে।
যেখানে মেয়েদের চাওয়াই নেই নিজের সম্মানের, মর্যাদার, সেখানে এইসব সুবিধাবাদী, ভোগবাদী পুরুষ সমাজের কোন প্রয়োজন কি আছে সেধে সেধে অধিকার দিতে যাওয়ার?


হাজার হোক, মুফতে পেলে তো বাঙ্গালী আলকাতরা ও গায়ে মাখে, তাই না? আর নারী তো এরচেয়ে হাজার গুণ লভনীয় জিনিষ। যাকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে জগতের সব চাওয়া পাওয়ার বৃত্তগুলো। তাদের যদি এতো সহজে পাওয়া যায় নিকাহ নামের ইহসানের দুর্গ তৈরি করবে ভোগবাদী স্বার্থপর পুরুষরা, এটা ভাবাই তো সময় নষ্ট। আর যে নারী নিজেও জানে সে নির্যাতিত সম্প্রদায়ের অধিকারী, বলে কয়ে ঢাক ঢোল পেটানো সামাজিক বৈবাহিক সম্পর্কেই যেখানে সে প্রাপ্যগুলো বুঝে নিতে পারেনা, ১০ জন মুরুব্বী কিংবা নিজের বাবার মীমাংসা সত্ত্বেও সেখানে নিজে নিজে সবার আড়ালে একটা অপকর্ম করে তার অধিকার চাইতে গেলেই অধিকার পাওয়া যাবে এই ধারনাটাই তো যুক্তিহীন অসাড়। হাজার হোক, যে নিজেই নিজের সম্মান করতে জানে না,অন্যরা তাকে সম্মান কীভাবে করবে?

------ শেখ সাফওয়ানা জেরিন

নসীম হিজাযীর অমূল্য উপন্যাসসমূহের নাম ও বিষয়বস্তু

নসীম হিজাযী: উপমহাদেশের ওয়াল্টার স্কট

নসীম হিজাযী-- নিঃসন্দেহে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের মধ্যে একজন এবং উর্দু ভাষার সাহিত্যিক দের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী। ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনায় ও তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নাতীত। কবিতা নির্ভর উর্দু সাহিত্যে গদ্যশিল্পি হিসেবেই তাকেই প্রধান বিবেচনা করা যায়। তার সমসাময়িক সাদত হাসান মান্টো,ইসমত চুঘতাই, কুররাতুল আইন হায়দার বা ইবনে শাফি উর্দুভাষায় গদ্য লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও তাদের প্রধান সাফল্য ছিল ছোট গল্পে। উপন্যাস রচয়িতা বিশেষ করে ঐতিহাসিক উপন্যাস রচয়িতা হিসেবে তার স্থান সবার থেকে উপরে। আদর্শগতভাবেও নসীম হিজাযী তার সমসাময়িক সাহিত্যিকদের অনেক বিপরীত। ভারত বিভাগের সময় নিজের জন্মভূমি ছেড়ে আসতে বাধ্য হওয়া নসীম হিজাযী ছিলেন ইসলামের একজন একনিষ্ঠ অনুসারি ও ইসলামের ইতিহাসের একজন গবেষক। অন্যদিকে তার রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস গুলির ঐতিহাসিক সত্যতা ও প্রশ্নাতিত। ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে রোমান্টিক কাহিনী সংযোজন করে একই সঙ্গে সুখপাঠ্য উপন্যাস রচনায় তাকে স্যার ওয়াল্টার স্কট এর সমকক্ষ বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে স্যার ওয়াল্টার স্কটের তুলনায় তার রচনায় ঐতিহাসিক তথ্যের কোন ভুল বা মিথ্যার উপস্থিতি নাই। বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক উপন্যাসের প্রথম লেখক বঙ্কিমচন্দ্র যে দোষে খুবই দুষ্ট। বঙ্কিম নিজের আদর্শ প্রচারে ঐতিহাসিক তথ্যের বিকৃতি ঘটাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। সে খানে নসীম হিজাযী তার ঐতিহাসিক সচেতনতা ও নির্ভুলতার জন্য বিশেষ ভাবে আলোচিত।

নসীম হিজাযীর জন্ম অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব এর গুরুদাসপুর জিলার সুজ্জানপুর গ্রামে ১৯১৪ সালে। তিনি সচ্ছল ও শিক্ষিত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার প্রকৃত নাম মুহাম্মদ শরিফ। যতটুক জানা যায় তিনি লাহোরে বি,এ পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। নিজেদের জমিজমা দেখাশুনা করাই ছিল তার জীবিকা। বিভাগপুর্ব সময়ে অল্প লেখালেখিও করতেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তান যখন স্বাধীন হয় তখন গুরুদাসপুর জিলা মুসলিম প্রধান হিসেবে পাকিস্তানে অন্তর্ভূক্ত হয়। কিন্তু ১৭ই আগষ্ট রেডক্লিফ কমিশনের রোয়েদাদ ঘোষিত হয় এবং সকল যুক্তিকে পাশ কাটিয়ে গুরুদাসপুর জেলাকে ভারতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এ অবস্থায় নসীম হিজাযী হিজরত করে পাকিস্তানে চলে আসতে বাধ্য হন। তার জীবনের এই ঘটনা গুলি তিনি পরবর্তিতে উপন্যাসের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। পাকিস্তান আসার পর তিনি সাহিত্যিক এর জীবন যে বেছে নেন। নিভৃতচারী এই উপন্যাসিক ১৯৯৬ সালে ইন্তেকাল করেন। ঐতিহাসিক উপন্যাস ছাড়াও তিনি কয়েকটি ব্যাঙ্গ রচনাও লিখেছেন। তার বেশিরভাগ উপন্যাস এরই মধ্যে বাংলা অনুবাদ হয়েছে। নসীম হিজাযী উপমহাদেশ,স্পেন ও আরবের ইতিহাস নিয়ে উপন্যাস রচনা করেছেন।

তার রচিত উপন্যাসগুলোর বিবরণ:

স্পেন সংক্রান্ত

১.ইউসুফ বিন তাশফিন: বাংলায় একই নামে অনুদিত। স্পেনে মরক্কোর সুলতান ইউসুফ বিন তাশফিন এর অভিযান এর কথা এই উপন্যাসের বিষয়।
২. শাহিন: "সিমান্ত ঈগল" নামে অনুদিত। স্পেন এর পতনের সময় সিয়েরা নিবেদা অঞ্চলে বদর বিন মুগিরার সংগ্রামের কথা এই উপন্যাসের বিষয়। বদর বিন মুগিরা স্পেনের ঈগল নামে খ্যাত ছিলেন।
৩. আধেঁরি রাত কি মুসাফির: "আঁধার রাতের মুসাফির" নামে অনুদিত। এই উপন্যাসের বিষয় গ্রানাডাকে রক্ষার শেষ চেষ্টা এবং শেষ পর্যন্ত কুখ্যাত এপ্রিল ফুল এর মাধ্যমে গ্রানাডার পতন।
৪. কলিসা আওর আগ (গির্জা ও আগুন): "শেষ রাতের মুসাফির" ও "শেষ বিকালের কান্না" নামে অনুদিত। এটি আধেঁরি রাত কি মুসাফির এর সিক্যুয়েল। গ্রানাডার পতনের পরবর্তি স্পেন এর মুসলিমদের অবস্থা ও কুখ্যাত ষ্পেনিশ ইনকুইজিশন এর অত্যাচার এর ইতিহাস এই উপন্যাসে আলোচিত হয়েছে।

ইসলাম পুর্ব ও প্রাথমিক যুগ

৫.কায়সার ও কিসরা: ইসলাম পুর্ব আরবের ইতিহাস ও গোত্রীয় দ্বন্দ্ব এবং তৎকালিন দুই পরাশক্তি রোম ও ইরানের যুদ্ধ এই উপন্যাসের কাহিনী। ইসলামের আবির্ভাব ও বিজয় এর কাহিনী এই উপন্যাসের প্রধান বিষয়।
৬. কাফেলায়ে হেজাজ: "হেজাজের কাফেলা' নামে অনূদিত। ইসলাম পুর্ব ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে কাদিসিয়ার যুদ্ধের পরবর্তি অবস্থা এই উপন্যাসের বিষয়।
৭. দাস্তান ই মুজাহিদ: "মরণজয়ী" নামে অনুদিত। এই উপন্যাসে খলিফ ওয়ালিদ এর সময় মুহাম্মদ বিন কাসিম, কুতায়বা বিন মুসলিম, মুসা বিন নুসাইর ও তারিক বিন যিয়াদ এর কাহিনী বর্নিত হয়েছে।
৮.মুহাম্মদ বিন কাসিম: শ্রীলংকার সাথে আরবদের বানিজ্যিক সম্পর্ক, ও মুহাম্মদ বিন কাসিমের জীবন ও সিন্ধু বিজয়ের কাহিনী এই উপন্যাসের বিষয়।

আব্বাসিয় খিলাফতের পতন:

৯.আখেরি চাটান: "শেষ প্রান্তর" নামে অনুদিত। চেঙ্গিস খান ও হালাকু খান কতৃক মুসলিম জাহানের উপর হামলা ও ধ্বংসের ইতিহাস এই উপন্যাসের বিষয়।
১০.আখেরি মায়ারকাঃ "চুড়ান্ত লড়াই' নামে অনূদিত।

উপমহাদেশ: 
১১.ইনসান আওর দেওতা: "আলোর কুসুম" ও "মানুষ ও দেবতা" নামে অনুদিত। ইসলাম পুর্ব ভারতিয় সমাজের অবস্থা বিশেষ করে বর্নাশ্রম ও অস্পৃশ্যতা এই উপন্যাসের বিষয়।
১২. মুয়াযযম আলি: "খুন রাঙ্গা পথ" নামে অনুদিত। এই উপন্যাসে নবাব আলিবর্দি খান ও নবাব সিরাজদেীলার পতন। পানিপথের তৃত্বিয় যুদ্ধ এবং ইংরেজদের উপমহাদেশের দখলের ইতিহাস বর্নিত হয়েছে।
১৩.আওর তলোয়ার টুট গেয়ি: "ভেঙ্গে গেলো তলোয়ার" নামে অনূদিত। এটি "মুযাযযম আলি" এর সিক্যুয়েল। এই উপন্যাসে মহিশুরের ব্যাঘ্র টিপু সুলতানের সংগ্রামের কাহিনী বর্নিত হয়েছে। যাকে পরাজিত করে ইংরেজরা উপমহাদেশের পূর্ন নিয়ন্ত্রন লাভ করে।
১৪.খাক আওর খুন: "ভারত যখন ভাঙ্গলো" নামে প্রকাশিত।এই উপন্যাসে ভারত বিভাগের ইতিহাস এবং বিভাগের সময় হিন্দু ও শিখ কতৃক মুসলিমদের উপর হামলার কাহিনী বর্নিত হয়েছে। পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জিলা যা প্রথমে ভোটের ভিত্তিতে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলেও রেডক্লিফ এর ষড়যন্ত্রে ১৭ই আগষ্ট ভারত ভুক্ত হয় তার ইতিহাস এবং কাশ্মির যুদ্ধ এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই নামে একটি ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে যা উর্দু চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে হিট বলে বিবেচিত।

১৫. পরদেশি দিরখাত(পরদেশি গাছ): "অপরাজিত" নামে অনূদিত। বিভাগ পুর্ব উপমহাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা এই উপন্যাসের বিষয় বস্তু। এই উপন্যাস এবং এর সিক্যুয়েল "গুম শুদা কাফিলা" নসীম হিজাযীর নিজের জীবনের কাহিনী নিয়ে লিখা।
১৬. গুমশুদা কাফিলা(হারানো কাফিলা): "রক্ত নদী পেরিয়ে" নামে অনুদিত। ভারত বিভাগ এর সময় ঘটে যাওয়া দাঙ্গা এবং বিভাগ পরবর্তি ইতিহাস এই উপন্যাসের বিষয়।

এছাড়াও নসীম হিজাযী কয়েকটি রম্য ব্যাঙ্গ রচনা ও লিখেছেন যেগুলি হচ্ছেঃ

১৭. সাকফাত কি তালাশ (সংস্কৃতিক সন্ধান)।
১৮.পুরস কি হাতি( পুরুও হাতি)।
১৯,সও সাল বাদ(শতবর্ষ পরে)।
২০.সফেদ জাযিরা(সাদা দ্বীপ) : এই রম্য উপন্যাস টিতে পাকিস্তানের আইয়ুব খানের শাসন এর সময়কালকে ব্যাঙ্গ করা হয়েছে।

ইউসুফ নবী প্রেম করেছেন একথা বলা হলো নবীর উপরে মিথ্যা অপবাদ

//"যে মহিলাটির ঘরে সে ছিলো সে তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে থাকলো এবং একদিন সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, "চলে এসো"। ইউসুফ বললো, "আমি আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি, আমার রব তো আমাকে ভালোই মর্যাদা দিয়েছেন (আর আমি এ কাজ করবো!) । এ ধরণের জালিমরা কখনো কল্যান লাভ করতে পারেনা।" মহিলাটি তার দিকে এগিয়ে এলো এবং ইউসুফও তার দিয়ে যেতো যদি না তার রবের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতো। এমনটিই হলো, যাতে আমি তার থেকে অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা দূর করতে পারি। আসলে সে ছিলো আমার নির্বাচিত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।" (সূরা ইউসুফঃ ২৩-২৪)//

প্রসঙ্গ : বোরকা পরে প্রেম করে হাত ধরাধরি করে হাটলেও নাকি এটা হালাল প্রেম !!! (আল্লাহ রক্ষা কর)।
"মানুষের মধ্যে ইদানিং খুব সচেতনতা Grow করেছে কিছু শুনলে দলিল চায়। অত্যন্ত ভাল আলামত। তাই একজন আমার কাছে দলিলও চেয়ে বসল। আমি বললাম আল্লাহ কি কুরআনে সুরা নূরে ৩০ নং আয়াতে পুরুষদেরকে এবং ৩১ নং আয়াতে নারীদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখতে বলেন নি?

যেখানে চোখ পড়লেই ইসলামে দৃষ্টি সরানোর কথা বলেছেন সেখানে TSC , ধানমন্ডি লেক কিংবা ফুলার রোডের রাস্তার পাশে বসে পুতুপুতু কথা বলা ইসলাম জায়েজ করে এ চিন্তা আসল কোথায় থেকে?

মহানবী (সাঃ) বলেছেন কোন জায়গায় ছেলে ও মেয়ে একা একসাথে থাকলে তৃতীয়জন হচ্ছে শয়তান"।

অনেকে আবার প্রেম পবিত্র, প্রেম শ্বাশ্বত-স্বর্গীয়। এসকল বুলি আওড়ায়। ভাই দলিল কি? ঐযে বাংলা সিনেমা: ইলিয়াস কাঞ্চন অন্জু ঘোষকে বলেছে!

Amazing

আমাদের গানে গানে প্রচার করা হয়

"প্রেম করেছেন ইউসুফ নবী, তার প্রেমে জুলেখা বিবি গোওওওওও",

হারাম ! হারাম ! গানে-গানে আল্লাহর এক নবীর নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে।ইবনে কাসীর থেকে সুরা ইউসুফ এর তাফসীর খানা পড়ে নিন।

ইদানিং আবার হালাল প্রেমের জোয়ারে ও দুএকজন গা ভাসিয়েছে, বোরকা পরে প্রেম করে হাত ধরাধরি করে হাটলেও নাকি এটা হালাল প্রেম !!! (আল্লাহ রক্ষা কর), আর সত্যিই আজিব এসমাজ ব্যাবস্থা !

আপনার বিয়ের বয়স হয়েছে আপনাকে বিয়ে দেবে না, অথচ প্রেম করলে কোন দোষ নাই। তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক সমস্যা, হ্যানতেনের লিষ্ট দেখায়।''

courtesy- Brother MuZahid Rasel

সানিন ! পেপসি খাবা?

সানিন ! পেপসি খাবা? ~

চট্টগ্রামের যে এলাকাতে এখন আছি, এখান থেকে সবচেয়ে কাছের বাজার হল ইয়াসিনের হাট। আসরের পর কিছু ওষুধ কেনার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। বাজারে পৌছতেই দেখা হল পরিচিত এক বড় ভাইয়ের সাথে। এ ভাইয়ের সাথে ঈদের দিনেও একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেটাও আগে একদিন শেয়ার করেছিলাম।

যাই হোক, দেখা হতেই সালাম আদান প্রদান হল। এরপর তিনি অনেকটা জোর করেই একটি মিষ্টির দোকানে নিয়ে গেলেন। বারবার চাপাচাপি করছেন, কিছু খেতেই হবে। রাজি হওয়াতে তিনি মিষ্টির অর্ডার দিলেন। খাওয়ার শেষ পর্যায়ে তিনি বললেন,

- সানিন (আমার ডাক নাম) পেপসি খাবা? এখানে তো পেপসি ছাড়া আর কিছুই নেই। – একথা বলেই তিনি দুটি পেপসির অর্ডার দিলেন।

- ভাইয়া! আমি পেপসি খাব না। আমাকে বরং ঠাণ্ডা পানি দেন।

তিনি বুঝলেন আমি কেন খেতে চাচ্ছিনা। এতটুকু সম্মান অন্তত তখন তিনি করলেন, আমাকে আর জোর করলেন না। কিন্তু নিজের জন্য ঠিকই নিলেন।
দুই তিন মিনিট পার হওয়ার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
-কেন খাবে না? ইহুদি প্রডাক্ট দেখে?
-জী

সাথে সাথে তিনি এত জোরে হেসে উঠলেন যেন আমি একটি মজার কৌতুক বলেছি।

-আরে বেকুব! তোমার মত এমন নিরামিষদের নিয়েই যত সমস্যা। আচ্ছা, তোমার কি মনে হয়? আমি তুমি পেপসি খাওয়া বন্ধ করে দিলেই কি ফিলিস্তিনে হামলা বন্ধ হয়ে যাবে? আরে আমি তুমি কেন, পুরো মুসলিম বিশ্বও যদি ইহুদি প্রডাক্ট বর্জন করে, তাহলেও কোন লাভ হবে না। ওদের এ কারণে যে আর্থিক ক্ষতি হবে, সেটা অন্য দিক দিয়ে ঠিকই ওরা পুষিয়ে নিবে। এই সব ফালতু আবেগ যত তাড়াতাড়ি বাদ দিবা, ততই ভাল।

-ভাইয়া! একটি কথা বলতে চাই। যদি আমাকে পুরোটা বলতে দেন আর মাইন্ড না করেন, তাহলে বলব।

অনুমতি পেয়ে বলতে শুরু করলাম,
-আপনার বাবাকে তো ওইদিন দেখতে গেলাম। আপনি বাসায় ছিলেন না তখন। অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে, তাই না। আমরা যখন গিয়েছিলাম, ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। আচ্ছা ধরেন, আমি আপনার এই বৃদ্ধ বাবাকে একটি চাপাতি দিয়ে আধা ঘণ্টা যাবত কেবল কোপালাম। কোপাতে কোপাতে চালনী বানিয়ে এরপর থামলাম। তারপর......

শেষ করতে পারলাম না। প্রচণ্ড রাগ হয়ে গেলেন।
-তোমাকে তো ভদ্র ছেলে মনে করেছিলাম। এগুলো কি বলতেস?

এবার আমাকে একটু গরম হতেই হল।
-আমি অভদ্র, বেয়াদব, আরও অনেক কিছু। কিন্তু আমার কথা আপনাকে পুরোটা আজ শুনতেই হবে। আপনি ঈদের দিনেও একটা ফালতু কথা বলেছেন, আমি কিছুই বলিনি।

রাগ হতে আজ তিনি প্রথম দেখলেন। থতমত খেয়ে বললেন, আচ্ছা বল, কি বলবা?

-হুম। যেটা বলছিলাম আর কি। তো আপনার বাবাকে এভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে মেরে ফেলার পর আমি সবার সামনে দিয়ে আপনার বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। সবাই জানল, কে মেরেছে। কিন্তু কারোরই কিছু করার ক্ষমতা নেই, সাহস নেই। এভাবে এক দুই দিন পার হওয়ার পর কোন একটি উপলক্ষে আমি আমার বাসায় খাওয়া দাওয়া আয়োজন করলাম এবং সেখানে সপরিবারে আপনাকেও দাওয়াত দিলাম।
তো, আপনি কি আসবেন?

আবার রাগ হয়ে গেলেন।
-মিয়া ! তোমাকে তখন সামনে পাইলে দুই হাত দিয়া ধরে মাঝখান থেকে ফেড়ে ফেলতাম। তুমি বলতেস দাওয়াত খাওয়ার কথা। বল কেমনে এ সমস্ত উদ্ভট কথাবার্তা।

মুচকি হেসে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম। গাযযার কয়েকটি ছবি তাকে দেখালাম।

-এইযে ছিন্নভিন্ন দেহটা দেখছেন, এটা কারো বাবা,আমার আপনার মুসলিম ভাই। আর এইযে দুভাগ হয়ে যাওয়া মেয়েটিকে দেখছেন, এটা কারো মেয়ে, আমার আপনার মুসলিম বোন। কারা মেরেছে জানেন? আপনার হাতে পেপসিটা যারা তৈরি করেছে, তারা।

ভাইয়া ! আমি পেপসি এ উদ্দেশ্যে খাওয়া ছাড়িনি যে, এতে করে আমি ইহুদি বা ইসরায়েলের অর্থনীতিতে ধস নামাতে পারব। আমি লাভ ক্ষতির হিসেব করে খাওয়া ছাড়িনি। আমিতো এ জন্য খাবনা,কেননা আমার মুখে উঠে না। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীর রক্তাক্ত হাতে বানানো প্রডাক্ট আমার মুখে উঠে না, তাই আমি খাব না। আল্লাহর কসম! এ পেপসি দেখলেই আমার মনে পড়ে, এ ছবিগুলোর কথা। আমি খেতে পারিনা ভাইয়া। আপনার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই বাস্তব।
আমি জানি না, এভাবে আমি কয়টা প্রডাক্ট বর্জন করতে পারব। কিন্তু আমি চেষ্টা করে যাব, যতটুকু সম্ভব।

একটানে এত গুলো কথা বলে নিচের দিকে তাকিয়ে একটু নিশ্বাস নিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি আওয়াজে চমকে উঠলাম। আল্লাহ তাআলা আমার এই ভাইটিকে কবুল করেন, হাতে থাকা পেপসির বোতল সামান্য পেপসি সহই ছুড়ে মারলেন। সবসময় তুমি করে বলতেন, এখন তুই করে বলে উঠলেন,

-ভাইরে! আমি আগে কখনও এই এঙ্গেল থেকে চিন্তা করিনি। আমি সরি, না বুঝে তোকে অনেক কথা বলে ফেলেছি। আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, যতদিন বেঁচে থাকবো, ইনশাআল্লাহ আর কোন দিন পেপসি ছুঁয়েও দেখব না.........

-- Rizwanul Kabir

মেয়েকে যখন কুরআনের গল্পগুলো বলি

মেয়েকে যখন কুরআনের গল্পগুলো বলি, প্রায়ই মনে হয় যে ভবিষ্যতের কথা তো জানিনা, কিন্তু এদের বর্তমানটা দেখলে অবাক লাগে। ও এবং ওর মত আরও অনেকে বড় হচ্ছে মাথাটা রূপকথা দিয়ে ভর্তি না করে!! সুবহানআল্লাহ!

পড়ার অভ্যাস আজীবন ছিল, তাই ছোট বয়সটায় হাতের কাছে পাওয়া কোনও রূপকথার বই পড়া বাদ দিইনি। ঠাকুমার ঝুলি, ইউক্রেনের বই, রুশ বই, অমুক দেশের রূপকথা আর তমুক দেশের রূপকথা আর ফেইরি টেলস তো আছেই। আর বড় হতে হতে আরও কত কি!!

তাই আমি জানি, রূপকথা হল রূপকথাই। বাস্তব কোনদিন ওর ধারে কাছেও যায়না। বরং ওসব শিখিয়ে দেয় জীবনের অন্য এক লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য-- "এই পৃথিবীতে চিরসুখে বসবাস করা" যা কখনও সম্ভব না। প্রায়ই যখন নিজেকে দেখি, অন্যকে দেখি, জীবনে এটা সেটা নিজেদের মনমত না হয়াতে হতাশ হতে, অথবা শুনি কেউ রেজাল্ট খারাপ করে আত্মহত্যা করছে অথবা প্রেমে বিফল হয়ে, অথবা জীবনের জটিল পর্বগুলোতে দিশেহারা হচ্ছে, তখন মনে পড়ে আমাদের থেকে এর চেয়ে ভালো আর কী হবে, আমরা হচ্ছি "রূপকথা জেনারেশান"!!!

এই বাচ্চাগুলি আল্লাহর অশেষ রহমতে জানেনা এখনো যে একা একা গভীর রাতে বেড়িয়ে ফিরলেও রাজকুমার আসে বাঁচাতে (বাস্তবে রাজকুমারের হাত থেকে বাঁচানোটা আরেক দুশ্চিন্তা!) এরা এখনো জানেনা যে সাতটা বামুন লোকের সাথে নিশ্চিন্তে(!!!)এক বাসায় থাকা যায়। শুনতে খারাপ লাগছে, তাই না? কি জানি! যখন পড়েছি, কার্টুন দেখেছি তখন তো খারাপ লাগতো না, মনে হত ওটাই লাইফ!!!

এবং আমার একান্ত নিজের একটি ধারণা যে এই বাচ্চাকালের আজগুবি গল্পগুলো টিনেজ বয়সে মারাত্মক প্রভাব ফেলে!! কল্পনার জগতের ভিত্তিই যে রূপকথা!!

যাই হোক, পাঁচ বছর বয়সে আমাদের তো কেউ কুরআনের গল্প বলেনি-- কুরআন যেহেতু গিলাফে ভরে শেলফে রাখার জিনিস(!!!) তাই! মেয়েকে বলতে গিয়ে নিজেও জানছি। সুবহানআল্লাহ, এত চমৎকার বাস্তব সব কাহিনী থাকতে কী প্রয়োজন বাচ্চাদের মাথায় গারবেজ ঢুকানোর???

একটা বাচ্চা জেনে বড় হতে পারে যে তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য চিরসুখীই হওয়া, কিন্তু আখিরাতে যেখানে তা আসলেই সম্ভব!! জেনে বড় হতে পারে যে তার এমন আশ্রয় আছে যিনি ইব্রাহীম (আ) কে আগুন থেকে বাঁচাতে পারেন, হারানো ইউসুফকে (আ) তাঁর বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেন। যিনি আমাদের কথা শুনতে পান, কেউ আমাদের জন্য না থাকলেও তিনি থাকেন!! জেনে বড় হতে পারে জীবনটা সিনেমা না, এতে কষ্ট আছে, বিপদ আছে, না পাওয়া আছে-- কারণ জীবনটা সামান্য একটু সময় মাত্র। চিরসুখী হওয়ার জন্য যথেষ্ট বড় না!!

আপনি ধার্মিক না?? সমস্যা নেই! তবু বাচ্চাদের কুরআনের গল্প, ইসলামের গল্পগুলো বলুন। অন্তত মস্ত ফাঁকিকে সত্যি বলে জেনে বড় হবে না ইনশাআল্লাহ!

ইংরেজি শেখানো দরকার? ইংরেজিতে চমৎকার বই পাওয়া যায় ইসলামের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা সহ, ছবি সহ!! ইন্টারনেটে অনেক কিছু পাওয়া যায়!!!

ওরা বড় হয়ে কী হবে সেতো আল্লাহই ভালো জানেন। আমাদের কাজ চেষ্টা করা আর দোয়া করা!! আর ওদের মাথায় আকাশ কুসুম কল্পনা ঠেসে দিয়ে বাস্তব থেকে দূরে নিয়ে এক অদ্ভুত অসুস্থতায় যদি বড় করি, তার হিসাব কিন্তু আমাদেরই দিতে হবে!! দুনিয়াতে এবং আখিরাতে! আল্লাহ যেন সেই ভয়াবহ কষ্ট থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখেন, আমাদের সন্তানদেরও! আমীন!

Courtesy - Nayla Nuzhat