আমাদের সমাজের উড়ুক্কু মাছেদের গল্প

উড়ুক্কু মাছ আমার খুব প্রিয় এক খাবার। সেন্ট মারটিনের অলি গলিতে এই হালকা নীলচে মাছ খুঁজে বেড়িয়েছি আমি আর ও...তারপর নিজেরা বেছে বেছে পছন্দ করে গরম গরম ফ্রাই খাওয়া। উড়ুক্কু মাছ ধরার কায়দা নাকি অভিনব...বোকা টাইপের এই মাছগুলা নাকি নৌকার আলো দেখলেই উড়ে উড়ে চলে আসে। সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ্‌র কি ক্বাদর। বড়শি, ছিপ, জাল ছাড়াই রিযিক যদি হাতের মাঝে ধরা দেয় তাহলে সেটা আল্লাহ্‌র নিয়ামাত ছাড়া আর কি। এমনই নিখুঁত তার সৃষ্টি। উড়ুক্কু মাছ চলবে নিজ গতিতে, আর মানুষ মানুষের। আশ্চর্যের বিষয় যে, আশরাফুল মাখালুকাত এই আমরাও উড়ুক্কু মাছ হতে বিশেষ আগ্রহী। যেদিকেই আলো দেখি, সেদিকেই উড়ে উড়ে চলে যাই।

আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপের সময়কার ফ্ল্যাশ মবের ট্রেন্ড দেখে আমি যারপরনাই হতবাক হয়েছিলাম। বিষয়টা কি জানার জন্য যখন নিউসফিডের কিছু ভিডিও ছাড়লাম, এক অজানা লজ্জায় কোনটাই দেখতে পারি নি। কল্পনাতেও ছিল না আমার যে কোন মুসলিম দেশের ছেলেমেয়েরা এমন বেহায়াপনায় অংশগ্রহণ করবে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত এই ছেলেমেয়েগুলো ফ্ল্যাশ মবের পর বাসায় গিয়ে সদ্য নামাজ থেকে উঠে আসা মমতাময়ী মাকে বলেছে, 'আম্মু, যা চরম পারফর্মেন্স করলাম না আমরা, রাস্তায় পুরা ভিড় লেগে গেসিল। সেইরকম হইসে। জারিফটা একটা স্টেপ ভুল করসে, কিন্তু ভিডিওতে এডিট করে নিব।' মা তখন হয়ত উড়ুক্কু মাছ সিনড্রোমে ভেসে (উড়ে) গিয়ে বলেছে, 'তাই? দেখাস তো!' এরকমই আমরা! ওকে বললাম, 'আচ্ছা, আমরা যদি এই সময়ে বাংলাদেশে থাকতাম আর রিকশা করে যেতে যেতে আচমকা এক ফ্ল্যাশ মবের মাঝে পড়ে যেতাম, তাইলে কি করতা?' ও সব দাঁত বের করে বলল, 'রিকশার উপর দাঁড়ায় জোরসে এক আযান!' বিপদের সময় আযান দেয়া ছাড়া আর কি করার আছে! আজকাল সব বিয়েতে প্রফেশনাল ফটোসেশান হয়, গায়ে হলুদ ছেলে মেয়ে একসাথে। হবু বধূর কোমরে হাত দিয়ে হবু বরের ছবি, বা হবু বর হাঁটু গেড়ে প্রপসাল দিচ্ছে জীবন সঙ্গিনীকে- এসব পোয কোথা থেকে আবিষ্কৃত তার মালুম নাই, কিন্তু পাশে বসা দাড়িওয়ালা বাবা আর মাথায় কাপড় দেয়া মায়ের বোকা বোকা হাসি দেখে বুঝতে পারি যে জাতি উড়ুক্কু মাছ হিসেবে পুরোপুরি সফল। কোন এক টেলি কোম্পানি কুরবানির পশুর সাথে সেলফি তুললে পুরস্কারের আয়োজন করল, আমরা উড়ে উড়ে গরুর গলা আর ল্যাজ ধরে ঝুলে পড়লাম। আমি খানিকটা নিশ্চিত যে তারা যদি পরের বছর সেলফির বদলে নিজের গায়ে ছাগলের মুখ ট্যাটু করার চ্যালেঞ্জ দেয়, তারপরেও কেউ পিছপা হবে না, ছেলেরা তো নাইই, মেয়েরাও না। খুব জলদি হয়ত আমরা বেহায়াপনার এভারেস্ট জয় করব। গর্ভবতীদের নয় মাসের বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি ফেসবুকের এ্যালবামে দেখা যাবে- অমুক 'মায়ের ভেতর জীবন' নামের প্রফেশনাল কোম্পানির তোলা। হিড়িক পড়ে যাবে তখন- স্ত্রীর পেটে হাত রেখে স্বামীর ছবি, স্ত্রীর পাশে পেট ফুলিয়ে দাড়িয়ে স্বামীর দুষ্টুমির ছবি ইত্যাদি। গর্ভবতী মেয়ের মা লজ্জা লজ্জা মুখ করে পাশের বাড়ির ভাবীকে বলবে, 'আজকারকার ছেলেমেয়েরা, বুঝেনই তো।আর আমার মেয়ে জামাই যে শৌখিন।' ছেলেদের প্যান্ট নামতে নামতে গোড়ালিতে নেমে যাবে, আবার চাপা হতে হতে আমাদের দেশের মানিক ছেলেগুলোর দম বন্ধ, পা বন্ধ হয়ে আসবে। মেয়েরা কখনো টাখনুর উপর টাইটস পড়বে, কখনো আলিফ লায়লা পায়জামা। কিছুদিন পর মহান ভারতের পদাঙ্ক অনুসরন করে আমরা rally করব প্রকাশ্যে চুমু খাবার অধিকারের জন্য, কিন্তু নিরবে ঘরের কোনায় তাহাজ্জুদ পড়লে সে বিরাট নিন্দনীয় ব্যাপার। 'তুমি আবার ওদের সাথে মিশতে যেও না! কোন বই টই দিলে নিবা না।' মমতাময়ী মায়ের শাসানী। হেদায়েত পাবার পর হিজাবের কারনে ভার্সিটিতে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি-কেউ জোর করেছে কিনা, হুট করে বিয়ে হয়ে গেল কিনা কোন হুজুরের সাথে, নাকি কোন পলিটিকাল দলে যোগ দিলাম। কিন্তু সারা বছর বোরখা পড়া মেয়েগুলো যখন প্রেসেন্টেশনের সময় হিজাব খুলে শাড়ি আর খোলা চুলে চলে আসলো দুই নম্বর বেশী পাবার আশায়, তখন কেউ কোন প্রশ্ন করল না। তাদের এই উন্নতিতে জাতি যারপরনাই খুশী তখন। অতএব উন্নতির জোয়ারে উড়ুক্কু মাছরা উড়ে উড়ে চলে যাবে ...আর আমরা চুনোপুঁটিরা কাঁদার মাঝে খাবি খেতে খেতে হতাশ হয়ে উড়ুক্কু মাছের উড়া দেখতেই থাকব...দেখতেই থাকব

-- নাবিলা নোশীন সেজুতি

কেউ গান গাইতে গাইতে মরে আর কেউ বিমান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার সময়ও কালিমা পড়ে মরে

ছোটবেলায় বিটিভি-র বাংলা সিনেমা দেখার ফল নাকি পারিবারিকভাবে ইসলামী জ্ঞানের অভাবের কারণে ঠিক জানি না, ছোটবেলা থেকেই আমাদের মাথায় একটা বিষয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে- মৃত্যুর মুহূর্তে কালিমা পড়তে পারিলেই কেল্লা ফতে! এর পক্ষে হাদীসও শেখান হয় যার সারাংশ এরকম- "যার শেষ বাক্য হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সে জান্নাতে যাবে"। কিন্তু মূল গলদটা হল কার শেষ বাক্য ঐটা হবে সেটা শেখানো হয় না।

Road accident কিংবা অন্য সবধরণের Sudden death বাদই দিলাম, আপনি যদি আপনার এসি ঘরে লাখ টাকার বিছানায় শুয়ে মারা যান আর আপনাকে কালিমা পড়ানোর জন্য শত শত "হুজুর" আনা হয় তবেও আপনার মুখ দিয়ে কালিমা বের হবে কিনা তার নিশ্চয়তা নাই। আপনি সারাজীবন যে পথে চলবেন সেটাই ঠিক করবে আপনার শেষ বাক্য কী হবে। অত্যাধিক মিউজিক আসক্তদের মৃত্যুর মুহূর্তে গান গাইতে গাইতে মারা যাওয়া কিংবা সিনেমা হল মালিকের "হাউসফুল হাউসফুল" করতে করতে মারা যাওয়ার বাস্তব এবং জ্বলন্ত উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। শুনে অবাস্তব মনে হতেই পারে, কিন্তু এটাই সত্য কারণ মৃত্যুর মুহূর্তে শয়তান সর্বশক্তি নিয়ে হাজির হয় যেন মানুষটা কালিমা পড়তে না পারে। সারাজীবন যে প্রবৃত্তির পূজা করে মিউজিক, সিনেমা কিংবা অন্যান্য হারামে লিপ্ত ছিল সে ঐ অন্তিম মুহূর্তে, যখন শয়তান সর্বশক্তি নিয়ে হাজির, আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে এটা ভাবাই বাতুলতা। বরং সে হবে শয়তানের আরও সহজ শিকার।

ভাবুন ফির'আউন আর ইউনূস (আ) এর কথা। ফির'আউন ডুবে যাওয়ার সময় বলেছিল- "আমি মূসা এবং হারুনের রবের উপর ঈমান আনলাম।" কিন্তু তার এই ঈমান আল্লাহ কবুল করেননি। আবার ইউনূস (আ) মাছের পেটে অন্তিম মুহূর্তে আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ সাড়া দিলেন। কারণ ফির'আউন সারাটা জীবন আল্লাহর অবাধ্যতায় আর ইউনূস (আ) আল্লাহর পথে কাটিয়েছিলেন। তাই মৃত্যুশয্যায় আপনার কালিমা নসিব হলেই যে আপনি মুক্তি পেয়ে গেলেন-এমনটা ভাবাও বোকামি।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এ একটা ডকুমেন্টারি সিরিজ আমার খুব প্রিয়-Air Crash Investigation. এখানে ভয়াবহ Air Crash গুলোর কারণ বিশ্লেষণ দেখানো হয়। একটা এপিসোডে দেখেছিলাম, একবার সৌদি এয়ারলাইনস এবং কাযাখ এয়ারলাইনস এর দুটি বিমানের মধ্যে আকাশে পাশাপাশি সংঘর্ষ হয় এবং সৌদি এয়ারলানস এর পুরো বিমানটি মুহূর্তের মধ্যে আকাশেই ছাই হয়ে যায়। তো, সৌদি এয়ারলাইনস এর ব্ল্যাকবক্সে শোনা পাইলটের শেষ কথাটি ছিল "আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ…"। চিন্তা করুণ, কেউ গান গাইতে গাইতে মরে আর কেউ বিমান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার সময়ও কালিমা পড়ে মরে। আপনার সারাটাজীবন ঠিক করবে আপনি কীভাবে মরবেন।

Collected From
Brother
Kabir Anwar

মায়ের সাথে বিবাহইচ্ছুক ছেলের ফোনালাপ [একটি রম্য লেখা]

** আপেল মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে **

আম্মা ফোন দিছিলো। আমি অনেকক্ষন সবার খোঁজ খবর নিলাম। তারপর ভাবলাম নিজেরও একটু খোঁজ খবর নেয়া উচিত।
-আম্মা আপেল কেমন আছে?
-মানে?
-না মানে আমি কেমন আছি?
-তুই কেমন আছিস সেটা আমি কি করে বলবো?
-আপনি জানেন আমি কেমন আছি।
-ভাল।
-না মা, আমি ভাল নাই।
-কেন?
-শীত পড়তেছে।
-তো গরম কাপড় বের করিস নি?
-করছি আম্মা।
-তো?
-কাপড়টাই কি সব আম্মা?
-তাহলে আর কি?
-জানিনা।
-খাওয়ার সমস্যা হচ্ছে?
-জানিনা।
-তুই কি বিয়ে করার জন্য এইরকম করতিছিস?
-না মা। ছি! আমি কেন বিয়ে করার জন্য এমন করবো?
-তাইলে সমস্যা কি? তুই ভালোনাই কেন?
-শীত আম্মা।
-শীত তো?
-খুব ঠান্ডা আম্মা।
-খুব ঠান্ডা মানে?
-আম্মা ছোট মামার বিয়েটা শীতকালেই হইছিল।
-তো?
-আম্মা আপুর বিয়েটাও কিন্তু হইছিল শীত কালে।
-হুম, তো?
-বড় ভাইয়ার বিয়েটাও কিন্তু হইছিল শীত কালে, মনে নাই?
-সব মনে আছে। তোর শীত সংক্রান্ত সমস্যাটা কি সেটা বল।
-কিছুনা আম্মা।
-তাইলে রাখি। ভালো থাকিস।
-আম্মা!
-কি হইলো আবার?
-খুব শীত।
-তো?
-এই শীতে কারো বিয়ে হইলে ভালো হইতো।
-তুই কি আবারো নিজের বিয়ের কথা বলতিছিস?
-না মা। ছি! নিজের বিয়ের কথা নিজে কিভাবে বলবো?
-তাইলে তোর সমস্যাটা কি?
-খুব শীত আম্মা।
-ভালো হইছে। ঠঁকঠঁক করে কাঁপতে থাক, আমি রাখলাম।
-আম্মা...
টুট টুট টুট
এখন সত্যিই শীত লাগতেছে। জাতি এরকম অবুঝ আম্মা দিয়া কি করিবে?
:v

'কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা' টার্মটা হিন্দুধর্মের, ইসলামে পুত্র-কন্যা যাই হোক, দ্বীনদার হলে তারা সম্পদ

'অমুকের মা' বা 'তমুকে মিসেস/বউ' ---- এটা কোন মেয়ের সম্মানজনক পরিচয় না। আমি আমার বাবার মেয়ে এবং জন্মের পর আমাকে একটা নাম দেয়া হয়েছে। আমার পরিচয় আমার নামে, আমার কাজে। আমার দেহ থেকে রুহটা যখন ফেরেশতা আল্লাহ্‌তালার কাছে নিয়ে যাবেন, তখন আল্লাহ্‌ জানতে চাইবেন তুমি কাকে নিয়ে আসলে? ফেরেশতা উত্তর দিবেন, " ......... এর মেয়ে সিফাত মাহজাবীনকে নিয়ে এলাম"।

কারো মা বা বৌ হওয়া --- মেয়েদের জন্য বিভিন্ন রোল, কিন্তু এটাই আসল না। তাই, মা না হলে 'জীবন বরবাদ' বা বিয়ে না হলে 'মাথায় বাজ' পড়ার কিছু নাই। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রাঃ) কোন সন্তান ছিল না, তাহলে কি তিনি ব্যর্থ?

* * * * *

'কন্যাদায় গ্রস্থ পিতা' টার্মটা হিন্দু ধর্মের কনসেপ্ট। ইসলামে সন্তান কন্যা বা পুত্র যাই হোক না কেন, সে যদি দ্বীনদার হয় তাহলে সে বাবামায়ের সবচেয়ে বড় সম্পদ


collected from sister
সেফাত মাহজাবিন

আমরা যেন অ্যাশট্রের মত না হই

আমি যে ছবিটা দিয়েছি সেখানে দেখা যাচ্ছে একটা অ্যাশট্রে যেখানে আবার প্রতীকের মাধ্যমে সিগারেটকে 'না' বলার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। মানে তাকে বানানোই হয়েছে সিগারেটের শেষাংশ ফেলার জন্য কিন্তু নিজেকে 'কল্যাণকামী' হিসেবে দেখানোর জন্য বার্তাও দিচ্ছে। এই ধরণের পাত্র কিংবা সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে "সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ" লেখা আমাদের হাসির খোরাক জোগায় বটে, কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যায় আমরা নিজেরাই কখনো কখনো এই অ্যাশট্রের মত আচরণ করি।

সমাজে খারাপ আছে; যা খারাপ তাকে খারাপই বলতে হবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু সমস্যাটা হল মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহের সাথে খারাপটাকে নিন্দে করতে যেয়ে সেটার প্রচার করে ফেলায়। গতবছর ঈদের আগে একজন পর্নস্টারের নামে বাজারে পোশাক এসেছিল। পোশাকটির বিজ্ঞাপন সবচেয়ে বেশি করেছিল, অন্তত আমার দেখামতে- ইসলামপন্থীরা। তারা প্রায় প্রতিটা কথায় ঐ পর্নস্টারের নাম উল্লেখ করে দেশটা গোল্লায় যাওয়ার হাহাকার ব্যক্ত করেছিলেন। এতে কি ওই পোশাক বিক্রি বন্ধ হয়েছিল? না, বরং যারা কখনো ওই নামটি শোনেনি তারা পরিচিত হয়েছিল, পোশাকটার প্রচার আরও বেড়েছিল।

আপনি যখন দ্বীনের পথে চলা শুরু করবেন তখন দেখবেন সমাজের বেশিরভাগ পরিস্থিতি আপনার সাথে খাপ খাচ্ছে না। খাচ্ছে না কারণ আপনি এখন যেভাবে চিন্তা করেন সমাজের বেশিরভাগ মানুষ সেভাবে করে না। এই কনট্র্যাডিকশন আপনার অন্তরে ক্ষতের সৃষ্টি করবে স্বাভাবিক, কিন্তু ক্ষতটাকে বারবার চুলকে বাড়িয়ে দেবার মধ্যে ফায়দা নেই।

কিছু মানুষকে দেখি সমাজের ছেলেমেয়েরা কীরকম নষ্টামি করে বেড়ায় তার বিবরণ দিয়ে সারাক্ষণ পোস্ট দিতে থাকেন। মেয়েরা কেন অশালীন পোশাক পরে (পোশাকের বর্ণনাসহ), ছেলেরা চিপায় চাপায় কী করে সব কিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ, মানুষ ভালো না, সমাজ ভালো না, দেশ ভালো না এই সেই করে আক্ষেপ করতে করতে দিন কাবার। এর মাধ্যমে ক্ষতির যে ব্যাপারটা ঘটে সেগুলো এরকমঃ

(১) যারা খারাপ ব্যাপারগুলো সম্পর্কে জানে না তারা পরিচিত হয়।

(২) যারা জানে এবং খারাপ বলে মানে তারা বারবার এসব শুনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন অনেকটা সহনীয়তা চলে আসে, অতটা খারাপ আর লাগে না।

(৩) বিরামহীনভাবে খারাপের বিবরণ শুনতে শুনতে মনে হয় গোটা সমাজটাই খারাপ, এই নষ্ট সমাজে ভালো হয়ে থাকাটাই অসম্ভব। তখন সে নিজেও খারাপের পথে বা বাড়ায়।

(৪) মানুষের মনে অযথা সন্দেহ সৃষ্টি করে। স্বামী তার দ্বীনদার স্ত্রীকে সন্দেহ করবে-'ও কি তাহলে জাহেল যুগে এই করেছে, সেই করেছে'। সবাই খারাপ -এমন একটা পিকচার মানুষের মনে সেট করে দেবার উপকারিতা আসলেই আছে কি?

মোটকথা, আমরা যেন অ্যাশট্রের মত না হই, যে সিগারেট খেতে নিষেধ করে খেয়াল করে না নিজেই সিগারেট খেতে উৎসাহিত করছে। ফেসবুকে লেখালেখির প্রথম যুগে আমার লেখার মধ্যেও এই টাইপের একটা হতাশার টোন ছিল। যখন বুঝেছি এটা ইমম্যাচিউর কাজ, তখন অ্যাভয়েড করেছি।

আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য সহজ করুন

-- জুবায়ের হোসেন

মোবাইল অপারেটররা আপনার সন্তানকে নষ্ট করে দিচ্ছে ফ্রি দিয়ে

অমুক ভাইয়ের সাথে সারাদিন স্কাইপি করমু.......

একটা সিম ফোনের নেট প্যাকের অ্যাড একটা সমাজের পুরা চিত্রটাই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। লাল ড্রেস পড়া গ্রাম্য স্কুল/ কলেজ ছাত্রীর কাছ থেকে কি আপনি এমন উত্তর আশা করবেন , যে তাকে ফ্রি নেট সার্ভিস দিলে বা বোনাস দিলেই সে সারাদিন স্কাইপি করবে কোন এক ছেলের সাথে?
এই যায়গাটায় ঠিক নিজের ছোট বোনকে কল্পনা করুন তো! মেনে নিতে পারবেন কি?
অথচ , বিজ্ঞাপনে এমন একটি ডায়ালগের মাধ্যমে কি একটা পজিটিভ আইডিয়া সৃষ্টি করা হল অমুক ভাইয়ের সাথে সারাদিন ভিডিও চ্যাট বা কথোপকথনকে!
বাবা মার সামনে উঠতি বয়সী মেয়েটা যখন এই বিজ্ঞাপন দেখে তখন আলাদা একটা অনুমতি, বা মানসিক ইতিবাচক অবস্থাই তৈরি হয় টিন এজদের জন্য, এটা অস্বীকারের কোন উপায় নেই।

যেন এটা কতো দারুণ একটা জিনিষ! অথচ , আপনার সন্তান, মেয়ে বা বোনের সারাদিন স্কাইপি চ্যাটকে আপনি কিন্তু অবক্ষয় হিসেবেই দেখবেন।
পারতপক্ষে কখনো করতেই দিবেন না, দেখলে ২ /৪ টা চড় থাপ্পড় ও দিতেই পারেন।

কিন্তু সিম কোম্পানিগুলো এটাকে অবক্ষয় ভাবছে না। কারন , কেউ সারাদিন স্কাইপি করলে তারাই লালে লাল হয়ে যাবে। প্রেম ভালোবাসার প্যাকজে না থাকলে ওদের পেট চলবে না। কারন , নেট কানেকশনের বড় ভোক্তা যুব সমাজ। আর যুব সমাজের কাছে প্রেম এক মরন ব্যাধি।

ইন্টারনেটের ব্যবহারটা আকাজে যতো কম করা যায় ততোই ভালো । দুঃখের ব্যাপার হল - শুধু সামাজিক যোগাযোগ , আড্ডাবাজিই আমরা শিখেছি ইন্টারনেটে। যেখানে অনেক গঠনমূলক কাজ ও এখানে করা যেতো। আর এখানে সার্চ দিলেই যা ইচ্ছা তাই পাওয়া যায়। কুড়িতেই পচন ধরানো খুব সহজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোন সমাজে।

একজন কলেজ ছাত্রীর জীবন সম্পর্কে কীইবা ধারনা হয়?
কতোটুকুই বা ভালো মন্দ বুঝতে পারে নিজের। আমি তো দেখি ভার্সিটিতে পড়া উচ্চ শিক্ষিত মেয়েরাও অনেক সময় অনেক বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা, বারবার হোঁচট খায়। আর আবেগজনিত ব্যাপারে হোঁচট বা ধোঁকা খাওয়া যে কোন বয়সের জন্যই একটা স্বাভাবিক বাস্তবতা। আর ঐ কলেজ ছাত্রীরই বা কি লাভ হয়! সারাদিন স্কাইপি করে। ফ্রিতে একটা ছেলেকে বিনোদন দেওয়া ছাড়া! আর এরাই সামনের জীবনে কিছুই করতে পারেনা। দিন ফুরালে ঐ অমুক ভাই ও আর পাশে থাকেনা।

আমাদের দেশটাও পাশের দেশ ভারতের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে দিন দিন । কয়দিন আগে একটা রিয়্যালিটি শোতে দেখেছিলাম মুম্বাইয়ের এক মেয়ের করুণ কাহিনী। সারাদিন স্কাইপিতে ভিডিও কল করতো, তাতেই সব উজার করে দিতো প্রেমিককে। কয়দিন পর তার সেই স্কাইপি ভিডিওগুলো নেটের যত্রতত্র পাওয়া যেতে শুরু করলো। এরপর প্রেমিকের প্রতারণার কথা বিশ্বকে জানাতে টিভি চ্যানেলের শরণাপন্ন হতে হল তাকে ।
আসলে মানুষ যা করে তারই ফলাফল পায় । আমরা চাইনা এইসব বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ফ্রি আর বোনাসের চক্করে আমাদের ছোট ভাই বোনরা বলির পাঠা হোক।

সব ফ্রি জিনিষই কিন্তু ভালো না। কি ফ্রি দিয়ে আপনার থেকে ওরা কি নিয়ে যাচ্ছে তা আপনি টের ও পাবেন না। মাগ্না পেলে নাকি বাঙ্গালী আলকাতরা ও গায়ে মেখে নেয়, কিন্তু একবার ভাবুন! আলকাতরা মাখা আপনাকে আয়নায় কিম্ভুতই দেখাবে। এমন ফ্রি কিছু নাইবা নিলেন যাতে নিজের জীবন ক্যারিয়ার আর গড়ে ওঠার মূল্যবান সময়গুলো আরেকজনকে বিনোদিত করে স্কাইপিতেই শেষ হয়ে যায়

-- সাফওয়ানা জেরিন

যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট

দুইদিক থেকে দুইজন মেয়ে শক্ত করে হিসানকে ধরে রেখেছে। আর আম্মু চেষ্টা করছেন ওর শক্ত করে বন্ধ করে রাখা মুখটি খোলার জন্য। অনেক কসরতের পর হাল ছেড়ে দিয়ে হিসান যেই মাত্র মুখটি হা করেছে, অমনি সাদা এপ্রোন পরা এক মহিলা এসে সেই ভয়ঙ্কর তিতা ক্যাপসুলটি ওর মুখে ঢুকিয়ে দিল। একি যেই সেই তিতা, উফ! ও কোনরকমে সেই জিনিসটা গিলে দেয়াল কাঁপানো কান্না শুরু করল। আম্মু তাড়াতাড়ি তাকে নিয়ে বাসার পথ ধরলেন। হিসান জানে গালি দেয়া খুব খারাপ একটা কাজ, নয়তো এতক্ষণে সে সেখানকার সবার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়তো। আর আম্মুর উপর যে রাগ হল তা বলার মত না। আম্মু আমাকে এক ফোঁটাও ভালোবাসেনা। তিনি সত্যিই আমাকে ভালবাসলে কি সেই ভয়ঙ্কর জায়গায় নিয়ে যেতে পারতেন! কেউ কাউকে ভালবাসলে কি তাকে ওই যমের তিতা ক্যাপসুল খাওয়াতে পারে! হিসান আম্মুর উপর রাগ করে সারাদিন গাল ফুলিয়ে হপ করে বসে থাকল।

আজ হিসান বড় হয়েছে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি দ্বীনের বুঝও এসেছে। তার সেই ক্যাপসুল খাওয়ার ইতিহাস মনে পড়লে আজো হাসি পায়। সে এখন বুঝে কোন মা-ই তার সন্তানের অমঙ্গলের জন্য কিছু করেনা। তাকে সেই সংক্ষিপ্ত সময়ে কষ্ট দেয়ার পেছনে এক দীর্ঘমেয়াদী বড় কল্যাণের উদ্দেশ্য ছিল। সে হসপিটাল থেকে ফিরছে, তার ব্লাড টেস্টে এক বড় অসুখ ধরা পড়েছে। কিন্তু এ নিয়ে তার কোন দুঃখ নেই, মহান রবের প্রতি কোন অভিযোগও নেই । অন্যান্য স্বল্পবুদ্ধির মানুষের মত সে বলবেনা, "তিনি রহমানুর রহীম হলে কেন আমাদের এই বিপদে ফেললেন? কেন আমাদের দুঃখ-কষ্টের ভেতর নিক্ষেপ করলেন?" কারণ সে জানে এইসব মানুষ ঠিক তেমন আচরণ করছে, যেমন সে করেছিল ক্যাপসুল খাওয়ার সময়। অথচ মহান রবের দয়া এত বিশাল যে মায়ের দয়ার সাথে তার তুলনা করাও বোকামীর পরিচয়। হয়তোবা এর মাধ্যমেই তাদের রব তাদের বৃহত্তর কোন কল্যাণের পথ দেখাবেন। মুসা (আঃ)র মা কি ভেবেছিলেন তার কয়েকদিন বয়সের শিশুকে নিজের কাছে রাখার পরিবর্তে উত্তাল নীল নদের পানিতে ফেলে দেয়ার পরিণাম কি চমৎকার হতে পারে। হতে পারে আপাতদৃষ্টিতে কোন জিনিস আমাদের অপছন্দনীয়, অথচ সেটাই আমাদের জন্য উত্তম। হিসান তার প্রিয় আয়াহটি তিলাওয়াত করতে করতে বাসার পথ ধরলো,

"ওয়ামাই ইয়াতাওয়াক্কাল আ'লাল্লহি ফাহুয়া হা'সবুহ" [৬৫:৩]
"যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট'

Collected from brother
MuhammadSajid karim

ঢাকার মসজিদগুলোতে কি যেন নাই অথচ গ্রামের মসজিদগুলোতে কি যেন আছে

মাস চারেক আগের রাত ১১:৪৫, গাবতলী
.
এশার নামাজ পড়তে গেলাম এক মসজিদে। দেখি ভিতরে তালা দিয়ে মুয়াজ্জিন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি খুলতে বললাম। সে খুলবে না, মসজিদ কমিটির আদেশ। আমি ঘাড়তেড়া গোছের , তিনিও কম যাননা। শেষমেশ তালা খুলিয়ে নামাজ পড়ে তারপর বের হলাম।
.
ঢাকার মসজিদগুলোতে কি যেন নাই। আছে কমিটি, টাইলস, এসি, ঝাড়বাতি, এয়ার ফ্রেশনার। ঘড়ির কাটার সাথে ছুটন্ত প্রতিদিনে পাঁচবার হাতের কাছে যে মসজিদ পাই, সেখানেই লাব্বায়েক বলে আসি।
.
.
অথচ গ্রামের মসজিদগুলোতে কি যেন আছে। টাইলস নাই, ঠান্ডা শানের বারান্দার উপর সকালের চিকচিকে রোদ আসে, চিৎকার করে মক্তবের পিচ্চিগুলা আমপারা পড়ে। চাপকল চেপে বদনা দিয়ে অযু করে সবাই। ইমাম সাহেব আর মুয়াজ্জিন এর চেহারাটা যেন কতকালের আপন। এসি নাই, কাঠের খড়খড়ি আর বড় জানালা দিয়ে বেশ বাতাস আসে। প্রতিটা ওয়াক্ত যেন একেকটা ছোটখাট সম্মেলন কেন্দ্র। একটা চেনা মুখ বেশ কয়দিন না আসলেই উদ্বেগ গলায় নিয়ে খোজ নিবেই কেউ। কারেন্ট চলে গেলে জেনারেটর নাই, মোমের আলোয় প্রার্থনাটা আরো বেশী আকুল হয়। শীতের রাতে একটানা ঝিঁঝিঁ ডাক ঢাকায় আমি পাইনি। ছোটকালে জুম্মার পর নানার ফেরার অপেক্ষায় থাকতাম, নানার পকেটে বাতাসা আছে তো ??
স্মৃতির ডালি খুলে বসার জন্য একটা মসজিদ যথেষ্ট

-- আহমেদ তাকী

যদি তোমরা আমার মধ্যে কোন বক্রতা দেখ তবে আমাকে সোজা করে দিও

​​ওমরও নেই। আর তেমন জনগণও নেই...

খলিফা হিসাবে ভাষণ দিতে গিয়ে হযরত ওমর (রাঃ) বলেন,
"যদি তোমরা আমার মধ্যে কোন বক্রতা দেখ তবে আমাকে সোজা করে দিও"।

সমবেত মুসলমানদের মধ্য থেকে একজন বলে ওঠেন, "তোমার মধ্যে কোন বক্রতা দেখলে আমরা তোমাকে তীক্ষ্ণধার তরবারী দিয়ে সোজা করে দেব"। একথা শুনে ওমর (রাঃ) বললেন,
"আল্লাহর হাজার শোকর যে, তিনি ওমরের খেলাফতের মধ্যে এমন ব্যক্তিও সৃষ্টি করেছেন যে তাকে তীক্ষ্ণধার তরবারী দিয়ে সোজা করতে পারে"।

এখনকার তথাককথিত গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার যুগে কর্তা ব্যক্তিরা ঘুষ কে জায়েয করে আর সরকারী পদকে আপন সম্পত্তি মনে করে...

তখনকার শাসক এবং শাসিত দুপক্ষেরই পুষ্টির উৎস ছিল কোরআন। এখনতো দুপক্ষই অপুষ্টিতে ভুগছে...

collected from
brother Muzahid Rasel

বাবার কাছে বিবাহযোগ্য মেয়ের চিঠি

বাবার কাছে বিবাহযোগ্য মেয়ের চিঠি

প্রিয় বাবা,
যদিও তুমি অনেক কাছেই আছো, তবুও কিছু কথা তোমাকে কিছুতেই মুখে বলতে পারছিনা। কিছুটা সামাজিক আচারের প্রতি নিষ্ঠা, আবার কিছুটা জড়তা এবং তোমার উত্তপ্ত চাহনি বিনিময়ের ভয়েই লেখার আশ্রয় নিচ্ছি।
কারন, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে আর যাই হোক কোন গঠনমূলক আলোচনা হতে পারেনা।
বুঝলে বাবা! পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষই মনে হয় দ্বিচারী মানসিকতার!
তুমি আমি আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষরা এই অভ্যাস কিংবা স্বভাব থেকে কিছুতেই বের হতে পারছি না।
বাবা হিসেবেই আমার যে কাজটা তুমি মেয়ে হিসেবে সমর্থন করো নি, ছেলের জন্য সেই একই কাজকে দ্বিগুণ উৎসাহে করার উপদেশ দিয়েছ সবসময়।
যাই হোক! কিন্তু আজ জীবনের একটা বড় বাঁকে এসেও তুমি সেই কাজই করছ।
তোমার মনে আছে কি? ভাইয়ার যখন বিয়ের কথা চলছিলো তখন এই তুমিই বাসার সমস্ত হাদিস বই নামিয়ে হারিকেন জ্বেলে খুঁজছিলে মোহরানা যেন মাত্রাতিরিক্ত বা বোঝা হয়ে না দাড়ায় সেই সংক্রান্ত বিধি বিধান। এবং পেয়েও গিয়েছিলে । যেদিন লতা ভাবির বাসায় এই সংক্রান্ত আলাপে গিয়েছিলে সেদিন হাদিস বইটিও সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলে, যেন তোমার ছেলেকে মেয়ে পক্ষ মোহরানার চাপে পিষ্ট করে ফেলতে না পারে, তার একটা আদর্শিক ভিত্তি দাড় করাতে পারো।
আর আজ সেই তুমিই যখন মেয়ের বাবা, তখন তুমিই বলছ- যে লাখ লাখ টাকা কাবিন ধরতে হবে, নাহয় আমার বিয়ে যে টিকবে, এই ছেলেটা যে আমাকে ছেড়ে যাবে না, তার কি নিশ্চয়তা থাকবে!
আবার উদাহরণ ও টেনে দিলে দারুণ। রুনু খালার ২৫ লাখ টাকা কাবিন ছিল, তাই ডিভোর্সের সময় বর বাধ্য হয়ে তা পরিশোধ করেছিলো। শমি কায়সারের কথা বলতেও তুমি ভুলো নি।
আচ্ছা বাবা! যেই ছেলের উপর তোমার এতোটুকু আস্থা নেই যে সে তোমার মেয়েকে ভালো রাখবে, যার চরিত্রের উপর তোমার এতোটুকু বিশ্বাস নেই যে সে অন্য কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবে না, তার কাছে তোমার আদরের কন্যাকে সমর্পণের চিন্তাই বা কি করে করো?
আর হাদিসেই তো আছে যে সৎ যুবক পেলে তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিও না।
তাকে কি তোমার যথেষ্ট সৎ মনে হয়েছে?
যদি হয়ে থাকে তাহলে অকারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করে কি লাভ? ভাগ্য বলতেও একটা কথা আছে। যদি ভাগ্য খারাপ হয়, কোটি টাকা কাবিন করেও তুমি আমার সংসার টিকাতে পারবে না।
আর গড়ার আগেই ভাঙার কথা যখন ভাবছ, তখন আসলেই এই সম্পর্কের ভিত্তির মজবুতি নিয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে।
বাবা, আদর্শ একটা প্যারামিটার। আর আমাদের এই প্যারামিটার হওয়া উচিৎ আমাদের জীবন বিধান। এখানে সবকিছুর মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়া আছে। তুমি যখন ছেলের বাবা তখন তুমি অপরের মেয়ের অধিকার খর্ব করে এটা কখনোই আশা করতে পারো না যে তোমার মেয়ের প্রতিও আরেক ছেলের বাবা সদাচারন করবে।
আর মুসলিম তো ভাই, এক দেহের মতো। তুমি আরেকজনের মেয়ের জন্য ও তাই পছন্দ করবে, যা নিজের মেয়ের জন্য করো। যে হাদিস অপরের মেয়ের জন্য প্রযোজ্য তা কি তোমার নিজের মেয়ের জন্যই অযৌক্তিক ভাবছ?
তাহলে বলতে হয়- আমরা ভীষণ সুবিধাবাদী, ভোগবাদী, এবং স্বার্থবাদী। নচেত, এই দ্বিমুখী চরিত্র কপটতা ছাড়া আর কি!
যে ছেলেটির উপর তোমার যথার্থই বিশ্বাস আছে, যে হ্যা, আমার আদরের কন্যাটির মেধা ও মননের সবেচেয়ে বেশী মূল্যায়ন সেই করতে পারবে, তাকেই বেছে নাও না আজ আমার জন্য।
আর মূল্যায়নের জন্য সবসময় কাড়ি কাড়ি টাকার দরকার হয়না। দরকার হয় সুন্দর একটা মনের। রুনু খালার জামাই যে এক লাখ টাকা বেতন পেতো, খালা যে তার এক টাকার মালিক পর্যন্ত ছিল না তা নিশ্চয়ই জানো? শুধু টাকা থাকলেই মানুষ মানুষকে মূল্যায়ন করতে সমর্থ হয়না বাবা। মানুষকে সম্মান করতে হলে চাই একটা সুন্দর মন।
ভাবছ, এখন থেকেই হবু স্বামীর স্বার্থ দেখা শুরু করেছি? বলবে আমি এখনই পর হয়ে গেছি? এটা জানো কি! যে মানুষটা আমাকে ভালো ও বাসবে না, আবার অতিরিক্ত মোহরানার ভয়ে তালাক ও দিতে পারবেনা, দিনের পর দিন অত্যাচার করবে, তার সাথেই সামান্য টাকার জন্য আমি চার দেয়াল আঁকড়ে পরে থাকি, এই কি চাও?
তবে তাই বলে ভেবো না নিজের সম্মান আর প্রাপ্যটুকু আমি বুঝে নিবো না। তবে সেটা অবশ্যই আমাদের আদর্শের প্যারামিটার অনুযায়ীই ঠিক করতে হবে। জীবন বিধানের কিছু অংশ মেনে কিছু অংশকে অগ্রাহ্য করে আর যাই হোক, একটা পবিত্র জীবন শুরু করার কথা আমি ভাবতেও পারছি না। আর ২০ লাখ ১০ লাখ ধরে বাকির খাতায় শূন্য আঁকার ইচ্ছাটাও তোমার মেয়ের নেই। আমরা যেন কপটতা থেকে বের হয়ে শুদ্ধ মানুষ হতে পারি। আজ রাখছি।
ইতি
তোমার আদরের দুলালী

collected from
Safoana Jerin

বাংলাদেশীদের নাম জটিলতাঃ দরকার স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের

বাংলাদেশীদের নাম জটিলতাঃ দরকার স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের
-- আবূ সামীহাহ্‌ সিরাজুল ইসলাম
  
বাংলাদেশীদের নাম জটিলতা একটা বিষয় যা নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয় বিভিন্ন সময়ে। নাম রাখার ক্ষেত্রে কোন বিশেষ স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেইন না করার জন্য নানা জটিলতা সৃষ্টি হয় বিভিন্ন স্থানে। স্বার্থান্বেষী দূর্নীতিবাজ সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাদের অনেকেই নামের স্ট্যান্ডার্ডহীনতার সুযোগ গ্রহণ করে অনেক সময় অন্যায় সুবিধা আদায়ে তৎপর হন অনেক নির্বিবাদী সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলার মাধ্যমে। এ ছাড়াও অনেক সময় নামের ধরণ নিয়ে অহেতুক আলোচনা-সমালোচনায় জড়িয়ে গিয়ে অনেকেই পড়েন বিপাকে। কিছুদিন আগে প্রথম আলোর কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান সহ আরো অনেকেই এরকম বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছেন। এদের কার কী উদ্দেশ্য ছিল সে বিতর্কে আপাততঃ যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই আমার। এছাড়া বিদেশে গিয়েও বাঙালীদের তাদের নাম নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।

আমাদের নাম রাখার ক্ষেত্রে দেশের মুসলিম জনগণ অনেকেই নামের আগে মুহাম্মদ যোগ করেন, যদিও এ ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নির্দেশনা নেই। কারো নাম যদি মুহাম্মদ রাখা হয় তাতে কোন ক্ষতি নেই বরং রসূলুল্লাহ (সঃ) প্রতি সম্মান ও ভালবাসারই তাতে প্রকাশ ঘটে। কিন্তু ব্যাপারটা হলো আমাদের দেশে সন্তানদের নাম মুহাম্মদ রাখা হয়না; বরং মুহাম্মদকে টাইটেল হিসেবে নামের সামনে যোগ করা হয়। এজন্য বাংলাদেশে বা ভারতীয় উপমহাদেশে কাউকে মুহাম্মদ বলে ডাকা হয়না। অনেক সময়, বরং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই, মুহাম্মদ পুরোটা লিখাও হয়না। লিখা হয় মুঃ, মোঃ, মোহাং, ইত্যাদি। এতে মুহাম্মদ নামের প্রতি কোন সম্মান প্রকাশ হয়না। নাম যদি রাখতেই হয় তাহলে কারো নাম মুহাম্মদই রাখা উচিৎ এবং তাকে মুহাম্মদ বলেই সম্বোধন করা উচিৎ। আমাদের নামের বানান যদি ইংরেজীতে লিখা হয় তাহলে দেখা যায় Muhammad কে সংক্ষেপে লিখা হচ্ছে MD, বা Mohd হিসেবে। এ দিয়ে নামের প্রতি সুবিচার করা হয়না। পশ্চিমে অনেক বাঙালী মুসলমানকে তাদের MD নামের জন্য অনেক বিড়ম্বনার শিকারও হতে হয়। অনেকের কাছ থেকে ডাক্তার সম্বোধনের বিড়ম্বনা হচ্ছে এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ব্যক্তিগতভাবে এই লেখকও এ ধরণের বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন।

মহিলাদের নামের আগে যোগ করা হয় মুসাম্মৎ বা মোসাম্মৎ। বাঙালী মুসলমানদের সাধারণ ধারণা হল এটা মুহাম্মদের স্ত্রীরূপ। প্রকৃত ব্যাপার হল, এটা মুহাম্মদের স্ত্রীবাচক প্রতিশব্দ নয়। বরং এর মানে হলঃ "তার নাম রাখা হল" বা "তাকে ডাকা হয় ----নামে"। সুতরাং কারো নাম যদি হয় মুসাম্মৎ ফাতিমা তাহলে এর মানে দাঁড়াবে "তার নাম রাখা হল ফাতিমা" বা "তাকে ফাতিমা নামে ডাকা হয়"। তাই কারো নামের আগে মুসাম্মৎ লাগানোর কোন মানে হয়না।

নাম রাখার ক্ষেত্রে আমাদের আরেকটা যে সমস্যায় পড়তে হয় তা হল ডাক নাম। আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের একটা (আসলে কয়েকটা) ভাল নাম আবার সাথে একটা ডাক নাম। মানুষের নাম রাখা হয় ডাকার জন্য/পরিচিতির জন্য। এজন্য সন্তানের যে নাম রাখা হয় তাকে সে নামেই ডাকা উচিৎ। অবশ্য ডাক নাম থাকতে পারে যা আসল নাম থেকেই উৎসারিত। ইউরোপিয়ান ধারাতে আমরা অনেকের ডাক নাম দেখতে পাই। আর সে ডাক নামগুলো একটা কনভেনশনের আলোকেই রাখা হয়। যেমন বিল। কারো নাম উইলিয়াম হলে তাকে ইংরেজী ভাষীরা বিল বলে থাকেন। তার মানে কারো ডাক নাম বিল হলে তারা সহজেই বুঝে নিতে পারে লোকটার আসল নাম উইলিয়াম। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কথাই ধরা যাক। ভদ্রলোকের আসল নাম উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন। কিন্তু তিনি বিল ক্লিন্টন হিসেবে পরিচিত। সব উইলিয়ামরাই ইংরেজীভাষীদের কাছে বিল হিসেবে পরিচিত। একইভাবে কাউকে ডিক ডাকা হলে তারা জানে যে তার আসল নাম রিচার্ড, কাউকে "বব" বা "ববি" ডাকা হলে তারা জানে যে ঐ ব্যক্তির আসল নাম রবার্ট। এগুলো সবই কনভেনশন। তাই এ ধরণের ডাক নামে কোন সমস্যা নেই।

ডাক নামের আরেকটা প্রচলন আছে অনেক জাতির মধ্যে, যা উৎসারিত হয় ব্যক্তির শারীরিক বা চারিত্রিক ও সামাজিক গুণাবলীর প্রতিফলন হিসেবে। যেমন আয়েশাকে (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সঃ) ডাকতেন হুমায়রা বলে। তিনি এটা এজন্য বলতেন যে আয়েশার (রাঃ) গায়ের রঙ ছিল লালছে-গোলাপী। রসূলুল্লাহর পরদাদাকে হাশিম [crusher] বলা হত কারণ তিনি রুটি গুড়ো [crush] করে সুরুয়ার সাথে মিশিয়ে হাজীদের খেতে দিতেন।

কিন্তু আমাদের ডাক নামের কোন স্ট্যাণ্ডার্ড বা কনভেনশন নেই। ফলে কারো ডাক নাম শুনে তার আসল নাম বা চারিত্রিক বা শারীরিক গুণাবলী বুঝার উপায় নেই। এসব ডাক নামগুলোকে আবার মূল নামের সাথে যোগ করে সরকারী কাগজ-পত্রেও লিখা হয়। যেমন কারো নাম আবুল হাশেম মুহাম্মদ টুকু। এক্ষেত্রে টুকু ডাক নামটা মূল নামের সাথেই কাগজে-কলমে স্থায়ী হয়ে যায়। ফলে সমস্যা হয়।

আমাদের দেশীয় মুসলমানদের মধ্যে নাম রাখার আরেকটা ধরণ হচ্ছে "আবূ" দিয়ে নাম রাখা। যেমন আবুল কাশেম, আবুল হাসান, আবূ ইউসুফ ইত্যাদি। এগুলো কোনটাই নাম নয়, বরং কুনিয়াত বা পরিচিতি বাচক নাম। এ নামগুলোর মানে করলে দাঁড়াবে 'কাশেমের পিতা', হাসানের পিতা, এবং ইউসূফের পিতা। এগুলো আরবদের প্রথা। তারা কারো সন্তান হওয়ার পর পিতাকে সম্মান দেখানোর নিমিত্তে সে সন্তানের নামে পিতাকে সম্বোধন করত। একই ভাবে মায়েদেরকে বলা হয় উম্মু অমুক। আমাদের দেশেও এ পদ্ধতি প্রচলিত আছে। লোকজন বলে থাকে "অমুকের বাপ" বা "অমুকের মা"। উপরের নামগুলো যথাক্রমে রসূলুল্লাহ্ (সঃ), আলী (রাঃ) ও ইয়াকুবের (আঃ) নাম। অনেক সময় সন্তান না থাকলেও আরবরা কাউকে কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তির নামের আলোকে আবূ দিয়ে সম্বোধন করে। যেমন কারো নাম আলী হলে তাকে আবুল হাসান ডাকা হয়, কারণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব আলী (রাঃ) এর বড় ছেলে ছিলেন হাসান (রাঃ), এবং সেই আলোকে আলীকে (রাঃ) আবুল হাসান ডাকা হত। একইভাবে কারো নাম ইয়াকুব হলে তাকে আবূ ইউসুফ ডাকা যেতে পারে। কিন্তু তা না করে লোকদের নামই রেখে দেয়া হয় আবূ দিয়ে। আমাদের দেশে অসংখ্য লোকের নাম আবুল কাশেম, আবুল হাসান, আবূ সুফিয়ান, আবু হেনা, ইত্যাদি। কারো নাম কাসেম (কাশেম নয়) হতে পারে, হাসান হতে পারে, সুফিয়ান হতে পারে, হেনা হতে পারে। কিন্তু এগুলোর আগে অহেতুক আবূ লাগানোর কোন মানে নেই। অবশ্য কিছু নাম আছে যেগুলো আবূ দিয়ে রাখা যেতে পারে এবং সেগুলো অর্থবোধকও। যেমন আবূল খায়ের। এর মানে হল তার সব কিছু ভাল।

আমাদের দেশে আরেক ধরণের নাম হচ্ছে সংক্ষেপিত (abbreviated) নাম। যেমন এ, কে, এম, অমুক (AKM ...), আ, ন, ম, তমুক (ANM .....), ইত্যাদি। এ, কে, এম, সম্ভবত আবূল কাসেম মুহাম্মদ এবং আ, ন, ম, সম্ভবত আবূ নোমান মুহাম্মদ। এগুলো নাম রাখার কতগুলো অর্থহীন পদ্ধতি। এ ধারাটা লোকেরা গ্রহন করেছে পূরনো দিনের মুসলিম স্কলারদের নামের অনুকরণ করতে গিয়ে। আগের দিনের আলেমদের পরিচিতির জন্য তারা তাদের পুরো নাম দীর্ঘ করে লিখতেন। যেমন প্রসিদ্ধ হাদীস সংকলন রিয়াদুস সালেহীনের সংকলক ইমাম নববীর নাম। তাঁর পুরো নাম লিখা হয়েছে এভাবেঃ "আবূ যাকারিয়া মুহিউদ্দীন ইহাহ্য়া ইবন শরফ আন নববী।" এখানে ইমামের মূল নাম হচ্ছে ইয়াহ্‌য়া, তাঁর পিতার নাম শরফ। সেজন্য তিনি ইয়াহ্ইয়া ইবন শরফ। দামেস্কের উপকন্ঠে নওয়া গ্রামে তাঁর জন্ম; সেজন্য তিনি নববী/নওয়ায়ী। তিনি আবূ যাকারিয়া নামে পরিচিত ছিলেন কারণ তিনি ইয়াহয়া। আর মুহিউদ্দীন তাঁর উপাধি যা সমকালীন মুসলমানগণ তাঁকে দান করেছিলেন। এখন আমাদের দেশে যে সমস্ত লোকেরা তাদের নাম এভাবে রাখেন তাদের চিন্তা করা উচিৎ এটার কোন মানে আছে কিনা। যে ছেলেটার নাম রাখা হল "আবুল কাসেম মুহাম্মদ বরকত-উল্লাহ্", তার 'কাসেম' নামে কোন ছেলে হয়নি; তার নামও "মুহাম্মদ" রাখা হয়নি এবং "বরকত-উল্লাহ্" ও তাঁর বাবার নাম নয়। এখন ঘটনাটা কী দাঁড়াচ্ছে?

আমাদের দেশীয় নামের বেশীরভাগই হল যৌগিক নাম। যেমন এই লেখকের নাম সিরাজুল-ইসলাম। এটা একটা যৌগিক নাম। শুধু সিরাজুল ডাকলে এটা একটা অর্থহীন নাম হয়ে পড়বে। প্রকৃত ব্যাপার হল নামটা আরবীতে যখন লিখা হয় তখন লিখতে হয় سراج الإسلام [সিরাজ আল-ইসলাম] রূপে। আরবী ব্যাকরণের ধারায় উচ্চারণের সময় বলতে হয় সিরাজুল-ইসলাম। যদি খালি সিরাজ বলা হয় তাহলে ঠিক আছে। যদি সিরাজুল বলা হয় তাহলে ইসলামও বলতে হবে। নাহলে এটা একটা অর্থহীন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। সেজন্য আমাদের একজন জাতীয় ক্রিকেটার এর নাম "মুহাম্মদ আশরাফুল" শুনতে খাপছাড়া শোনা যায়। তাকে বলা যেত "মুহাম্মদ আশরাফ"। আশরাফুল বললে সাথে অন্য কিছু যোগ করে বলতে হবে।

লিঙ্গভেদ বুঝা না যাওয়ার মত কিছু নামও আমাদের দেশে রাখা হয়। আরবীতে সুস্পষ্টভাবে পুরুষবাচক নামকে আমাদের দেশে দিব্যি মেয়েদের নাম হিসেবে রেখে দেয়া হচ্ছে। যেমন শামীম, শাহীন, ইত্যাদি। আবার আরবীতে মেয়েদের জন্য প্রচলিত কিছু নামকে দিব্যি ছেলেদের জন্য রেখে দেয়া হচ্ছে। যেমন নূর, হুদা, শামস, ইত্যাদি। দেশীয় কিছু নামকেও আবার কনভেনশন লংঘন করে ছেলেদের জন্য রাখা হচ্ছে যা প্রকৃতপক্ষে হওয়া উচিৎ ছিল মেয়েদের। যেমন ফুলের নাম। কনভেনশনালী ফুলের নাম মেয়েদের নাম হয়। কিন্তু দেখা যায়, শিমুল, পলাশ, টগর ইত্যাদিকে দিব্যি ছেলেদের নাম হিসেবে রেখে দেয়া হচ্ছে। অথচ এগুলো মেয়েদের নাম হওয়ার কথা ছিল।

আমাদের নামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা যেখানে সেটা হল কারো নাম থেকে তার বাবার নাম বা বংশের নাম বুঝার কোন উপায় থাকেনা। নাম রাখা হয় একেকজনের কয়েকটা এবং এর সবগুলোই একজনের নাম। ধরা যাক কারো নাম মুহাম্মদ ফারহান শাহীন অথবা আবূ নোমান মুহাম্মদ রকিবুল ইসলাম। এখানে প্রথম নামটার তিনটা অংশ এবং তিনটি অংশই ঐ ব্যক্তির। ওখানে মুহাম্মদ তার নাম নয় বরং প্রচলিত দেশীয় স্টাইলে ওটা নামের আগের টাইটেল। ফারহান এবং শাহীন দু'টোই তার নাম। হয়তো ঐ ব্যক্তির আবার একটা ডাক নামও আছে। দ্বিতীয় ব্যক্তির নামের ক্ষেত্রে হয়তো তার আসল নাম হল রকিবুল ইসলাম। কিন্তু তিনি আবূ নোমান লাগিয়ে নিয়েছেন একটা স্টাইল হিসেবে। আর মুহাম্মদতো দেশীয় ব্যাপার যা আগেই আমরা আলোচনা করেছি। আর যদি নাম একটা স্ট্যাণ্ডার্ড বজায় রেখে রাখা হত তাহলে প্রথম নামের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ হতো লোকটার নাম, ফারহান হত তার বাবার নাম এবং শাহীন তার বংশের নাম। দ্বিতীয় নামটার সমস্যার কথা আমরা আগেই আলোচনা করেছি।

নাম এমন হওয়া উচিৎ যাতে করে প্রথম নামটা হবে ব্যক্তির নাম, দ্বিতীয় নামটা বাবার এবং শেষ নামটা বংশের। এটা ঠিক যে আমাদের দেশে কিছু লোক বংশীয় নাম ব্যবহার করেন। যেমন চৌধুরী, ভূঞা, পাটোয়ারী, কাজী, ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হল এগুলো কোন নাম নয় বরং উপাধি। যিনি জমিদার ছিলেন তিনি চৌধুরী ছিলেন, কিন্তু তাঁর বংশের লোকেরা সব কীভাবে চৌধুরী হয়? যিনি কাজী ছিলেন তিনিতো কাজী ছিলেনই; অন্যরা কীভাবে কাজী হল। একই কথা প্রযোজ্য অন্য উপাধিগুলোর ক্ষেত্রেও। বংশীয় নাম হচ্ছে মানুষের বংশের কোন পূর্বপুরূষের নাম, যার থেকে তাদের বংশধারা বিস্তৃত হয়েছে। নাম দেখেই বুঝা যাওয়ার কথা দুজন ভাই-বোনকে বা দুজন ভাইকে। কিন্তু আমাদের দেশের নাম দেখে দুজন লোক যে পরস্পর সম্পর্কিত তা বুঝার কোন উপায় নেই। বাংলাদেশীদের অনেকেরই নামের শেষে ইসলাম, উদ্দীন, আহমেদ আছে। কিন্তু এরা কেউ একই বংশের লোক নয়। বাইরে গেলে অনেকেই জিজ্ঞেস করে এ ব্যাপারটা নিয়ে। আর এটা বুঝানো বেশ কষ্টসাধ্য কাজ।

নামের স্ট্যাণ্ডার্ডাইজেশন না থাকায় ইনফরমেশন অর্গানাইজেশনে সমস্যা হয় অনেক। বাংলাদেশে এখন কম্পিউটারাইজড রেকর্ড করা হচ্ছে, জাতীয় পরিচয় পত্র ইস্যু করা হচ্ছে, জন্ম নিবন্ধন করা হচ্ছে, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে, ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে নামের স্ট্যাণ্ডার্ডাইজেশন খুব জরুরী। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের আবেদন পত্রে দেখলাম লিখা আছে "নামের প্রথম অংশ First Part [Given Name]" এবং "দ্বিতীয় অংশ Second Part [Surname]।" এখন জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে যদি প্রত্যেক লোককে তাদের একটা বংশীয় নাম গ্রহণ করতে বলা হয় যা তাদের একজন কমন পূর্বপুরূষের নাম হবে তাকে তাদের সারনেম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। চৌধুরী, ভুঞা, ইত্যাদিকে বাদ দিতে হবে। কারণ দেশের এক এক জায়গার চৌধুরী বা ভুঞারা একই বংশের লোক নন। আর এইগুলি কোন বংশীয় নাম নয়, বরং অতীতের কোন ব্যক্তির টাইটেল [পদবী]। বংশের নামের ক্ষেত্রে সেই প্রথম চৌধুরী বা ভুঞার নামটাকে তার বংশের লোকেরা সারনেম হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। নামের প্রথম অংশ হওয়া উচিৎ সেই নাম যা দিয়ে তাকে ডাকা হবে; দ্বিতীয় অংশ হবে পিতার সেই নাম যা দিয়ে তাঁকে ডাকা হয়; আর শেষ অংশ হবে বংশের নাম। এভাবে ইনফরমেশন অর্গানাইজেশন সহজ হয়। এবং তিন অংশ মিলিয়ে খুব কমক্ষেত্রেই দুই ব্যক্তির এক নাম হবার সম্ভাবনা থাকবে।

জন্ম নিবন্ধনের দায়িত্ব যারা পালন করেন তাদেরকে এ সব ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। তাহলে ব্যাপারটা ঠিকঠাক মত হয়ত হবে। এ ক্ষেত্রে আরো যে বিষয়ে দৃষ্টই দেয়া দরকার তা হল, বাংলা নামের রোমান অক্ষরান্তর [transliteration]। কোন না কোন কারণে আজকাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে বাংলা নামের রোমান ট্রান্সলিটিরেশনের খুব খারাপ অবস্থা। বাংলা অক্ষরগুলোর যথাযথ উচ্চারণ না জানার কারণে নিজেদের নামগুলোতে রোমান বর্ণমালায় লিখতে গিয়ে উল্টাপালটা করে ফেলছে বাঙালীরা। আর এ কারণে বিদেশে এসে নামের জন্য হাসি মশকরার শিকার হচ্ছে অনেকেই। যদি স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন থাকত এবং যথাযথ বানানে লিখা হত তাহলে বিভিন্নজনের পরিচিতি বিভ্রাট ও অহেতুক অনেক বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।

গল্প: হারানো বস্তু

হারানো বস্তু

নতুন সাইকেল কিনেছে শাহীন। অনেক আব্দারের পর এই সাইকেল প্রাপ্তি। সুযোগ পেলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বন্ধ সলীম তো আগেই কিনেছে। আগে দু'জনে একটা চালাতো, এখন দু'জনে দুইটা।
বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাটে পানিও জমেছে। জমে থাকা পানির ওপর দিয়ে সাইকেল চালানোর মজাই আলাদা। পানির বুক কেটে সাইকেলের চাকা যেভাবে তরতর এগিয়ে যায় দেখলে মনে হয় জাহাজ চলছে সাগরের বুক চিরে।
সেদিন বিকেলে দু'বন্ধু মিলে জোরে সাইকেল চালানোর প্রতিযোগিতা করছে। জমে থাকা পানি, খানা-খন্দ কিছুই মানছে, পঙ্খিরাজের মতো সাইকেলকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সামনে ভাঙা রাস্তায় অনেক পানি জমে আছে। দু'জন না থেমে সাইকেল চালিয়ে পার হয়ে গেলো। চার চাকার অবিশ্রাম ঘূর্ণনে, খাদের পানি ছিটকে গিয়ে রাস্তার দু'পাশটা ভিজিয়ে দিল। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ লোক। তার শরীরের নিচের অংশ পুরোটাই ভিজে গেলো।
সাহীন-সালিম বিষয়টা দেখেও না থেমে জোরে সাইকেল চালিয়ে যেতে থাকলো। এটা দেখে বৃদ্ধলোকটা জোরে হাঁক দিয়ে বললেন:
-খোকারা! তোমরা মূল্যবাণ একটা বস্তু ফেলে যাচ্ছ কিন্তু।
দু'জনেই কথাটা শুনে থামল। সাইকেল ঘুরিয়ে বৃদ্ধলোকটার কাছে এসে জানতে চাইলো:
-আমাদের কী পড়ে গেছে দাদু?
-ভদ্রতা ও শিষ্টাচার।

সৌজন্যে : Atik Ullah
গল্পসল্প- স্বল্পগল্প সিরিজ

একটি ভুল শব্দঃ অকাল মৃত্যু

​​একটি ভুল শব্দঃ অকাল মৃত্যু

কম বয়সে কারো মৃত্যু হলে অকাল মৃত্যু শব্দটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই প্রয়োগ এড়িয়ে চলা কর্তব্য। কারণ প্রত্যেক প্রাণীর জন্য 'মৃত্যু' যেমন অনিবার্য তেমনি তার দিন-ক্ষণও নির্ধারিত। সেই নির্ধারিত সময়েই তার মৃত্যু হবে। এতে সামান্য এদিক-সেদিক হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وما كان لنفس ان تموت الا باذن الله كتابا موجلا

তরজমা : আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কারো মৃত্যু হতে পারে না। কেননা, তা সুনির্ধারিত।-সূরা আলইমরান : ১৪৫

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

لو يواخذ الله الناس بظلمهم ما ترك عليها من دابة ولكن يوخرهم الى اجل مسمى فاذا جاء اجلهم لا يستأخرون ساعة ولا يستقدمون

তরজমা : আর যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের জুলুমের কারণে শাস্তি দিতেন তবে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কোনো প্রাণীকেই রেহাই দিতেন না, কিন' তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের নির্ধারিত সময় উপস্থিত হয় তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করতে পারে না।-সূরা নাহল : ৬১

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

قل فادرؤا عن انفسكم الموت ان كنتم صدقين

তরজমা : আপনি বলে দিন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে নিজেদেরকে মৃত্যু থেকে রক্ষা কর।-সূরা আল ইমরান : ১৬৮

হায়াত-মওতের মালিক আল্লাহ তাআলা এবং পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রাণীর জীবনকাল আল্লাহ তাআলার নিকট সুনির্ধারিত। অতএব কেউ যদি মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পর মারা যায়, তবে এইটুকুই তার হায়াত। তদ্রূপ কেউ যদি পঁচিশ-ত্রিশ বছরের যৌবনকালে মৃত্যুবরণ করে তবে এই পঁচিশ-ত্রিশ বছরই তার হায়াত। তার মৃত্যু সেই সময় মতোই হয়েছে, আল্লাহ তাআলা যা তার জন্য নির্ধারিত করেছেন। এমনিভাবে একশ বছর বয়সে কারো মৃত্যু হওয়ার মানে এই নয় যে, সে তার জন্য নির্ধারিত সময়কালের অধিক হায়াত পেয়েছে। এটি অতি সহজ একটি কথা।

সুতরাং কম বয়সে কারো মৃত্যু হলে সমবেদনা জানাব, মরহুমের মাগফিরাতের জন্য দুআ করব, বড় জোর বলব যে, তার তাকদীরে কত কম হায়াত লিখিত ছিল! কিন্তু এটাকে আবেগের বশে অকাল মৃত্যু শব্দে ব্যক্ত করব না।

-

একটি ভুল শব্দঃ অকাল মৃত্যু

কম বয়সে কারো মৃত্যু হলে অকাল মৃত্যু শব্দটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই প্রয়োগ এড়িয়ে চলা কর্তব্য। কারণ প্রত্যেক প্রাণীর জন্য 'মৃত্যু' যেমন অনিবার্য তেমনি তার দিন-ক্ষণও নির্ধারিত। সেই নির্ধারিত সময়েই তার মৃত্যু হবে। এতে সামান্য এদিক-সেদিক হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وما كان لنفس ان تموت الا باذن الله كتابا موجلا

তরজমা : আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কারো মৃত্যু হতে পারে না। কেননা, তা সুনির্ধারিত।-সূরা আলইমরান : ১৪৫

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

لو يواخذ الله الناس بظلمهم ما ترك عليها من دابة ولكن يوخرهم الى اجل مسمى فاذا جاء اجلهم لا يستأخرون ساعة ولا يستقدمون

তরজমা : আর যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের জুলুমের কারণে শাস্তি দিতেন তবে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কোনো প্রাণীকেই রেহাই দিতেন না, কিন' তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের নির্ধারিত সময় উপস্থিত হয় তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করতে পারে না।-সূরা নাহল : ৬১

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

قل فادرؤا عن انفسكم الموت ان كنتم صدقين

তরজমা : আপনি বলে দিন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে নিজেদেরকে মৃত্যু থেকে রক্ষা কর।-সূরা আল ইমরান : ১৬৮

হায়াত-মওতের মালিক আল্লাহ তাআলা এবং পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রাণীর জীবনকাল আল্লাহ তাআলার নিকট সুনির্ধারিত। অতএব কেউ যদি মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পর মারা যায়, তবে এইটুকুই তার হায়াত। তদ্রূপ কেউ যদি পঁচিশ-ত্রিশ বছরের যৌবনকালে মৃত্যুবরণ করে তবে এই পঁচিশ-ত্রিশ বছরই তার হায়াত। তার মৃত্যু সেই সময় মতোই হয়েছে, আল্লাহ তাআলা যা তার জন্য নির্ধারিত করেছেন। এমনিভাবে একশ বছর বয়সে কারো মৃত্যু হওয়ার মানে এই নয় যে, সে তার জন্য নির্ধারিত সময়কালের অধিক হায়াত পেয়েছে। এটি অতি সহজ একটি কথা।

সুতরাং কম বয়সে কারো মৃত্যু হলে সমবেদনা জানাব, মরহুমের মাগফিরাতের জন্য দুআ করব, বড় জোর বলব যে, তার তাকদীরে কত কম হায়াত লিখিত ছিল! কিন্তু এটাকে আবেগের বশে অকাল মৃত্যু শব্দে ব্যক্ত করব না

collected from brother
ফাতহুল কারীব

বিয়ের আগে প্রেম করা আর বিয়ের পর সংসার করা-দুটো ভিন্ন জিনিস

বিয়ের আগে প্রেম করা আর বিয়ের পর সংসার করা-দুটো ভিন্ন জিনিস। বিবাহপূর্ব প্রেম একটা ফ্যান্টাসি। এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েই নিজেকে সর্বোচ্চ উৎকৃষ্টরূপে উপস্থাপন করতে চায়। কদিন পরপর দেখা বা সপ্তাহে একদিন ডেটিং- ছেলেটি নিজের সামর্থ্যের সেরা উপস্থাপনটিই নিয়ে আসতে চায়, মেয়েটিও চায় তার প্রেমিক তাকে পরম সুন্দরী হিসেবেই দেখুক। তাই প্রেমের দিনগুলোতে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের নেতিবাচক ব্যাপারগুলো পরস্পরের কাছে প্রকাশ পায়না, দুজনেই তা যথাসম্ভব লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে।

সংসার জীবন আলাদা ব্যাপার। এখানে নিত্যদিনের অভ্যাস প্রকাশ পাবে, কৃত্রিম ভালোমানুষির পর্দা উন্মোচিত হবে। চব্বিশঘণ্টা একটা মানুষের সাথে থাকলে তাকে বোঝা যায়, চেনা যায়, সত্যিকারভাবেই চেনা যায়। প্রেমের সময়ের মত ক্ষণিকের দেখা আর ভাববিনিময়ের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সহজাত আকর্ষণের চাপল্যভরা মোহনীয় সময়টা তাই সংসারজীবনে থাকেনা। সংসারজীবনে আবেগের চেয়ে বাস্তবতার ভূমিকা বেশি। ভার্সিটির গেট থেকে বেরোলে যে মুখটি দেখার জন্য আকুলতা থাকত, জীবনযুদ্ধের সংগ্রামরত দিনরাতের সংস্পর্শ সেই আকর্ষণটা আর রাখেনা। নির্জনে বসে প্রেয়সীর হাত ধরে যে রোমান্টিসজমে বুঁদ হওয়া সহজ, বিবাহিতজীবনে সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফিরে কানের কাছে বাচ্চা ছেলের ঘ্যানঘ্যান আর বউয়ের অভিযোগের ফিরিস্তি শোনার মুহূর্তে সেই রোমান্টিসিজম থাকেনা। মনে ঘোরে একই কথা-"তোমাকে তো বিয়ের আগে এমন মনে হয়নি!"

প্রেমের সম্পর্কগুলো ক্ষণিকের ভালোলাগা থেকে গড়ে ওঠা। ওটা আর একটা মানুষের সাথে জীবন কাটিয়ে দেওয়া এক ব্যাপার না। এজন্য যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ধৈর্য আর ত্যাগের দরকার সেটা তথাকথিত প্রেমের সম্পর্কে কখনোই গড়ে ওঠা সম্ভব না। দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলো একে অন্যের সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে সমাধান হয়ে যায়না। মনোমালিন্যের সময়টাতে পার্কে বসে ফুল বিনিময়ের স্মৃতিচারণে খেদ দূর হয়না, আরো বাড়ে।

সেক্যুলাররা প্রায়ই অ্যারেনজড ম্যারেজের দুর্নাম করতে গিয়ে বলে-'ছোটবেলা থেকে আমরা শিখি অচেনা মানুষের দেওয়া খাবার না খেতে, অথচ অ্যারেনজড ম্যারেজের মাধ্যমে একজন অচেনা মানুষের সাথে বিছানায় শুতে বাধ্য করা হয়!' অচেনা মানুষই বটে। যেমন জাফর ইকবাল বলেছিল বিয়ের আগে অন্তত তিনবছর প্রেম করে পরস্পরকে 'চিনে' নেওয়া দরকার। মারহাবা। এই 'চিনে নেওয়া' কতটা সম্ভব সেটা প্রেম করে বিয়ে করা দম্পতিদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সাময়িক ভালোলাগা আর মা-বাবার পকেট ফাঁকা করা ফূর্তির দিনের উপলক্ষই যদি 'চিনে নেওয়া' হত তাহলে আর বিয়ের পর প্রিয় মানুষটির 'অন্যরূপ' দেখে কেউ হতাশ হত না।

বস্তুত বিয়ের আগের প্রেমের সময়টাতে শয়তান একে অন্যকে বিউটিফাই করে, ফলে হারাম সম্পর্কের মোহ যেমন বাড়ে তেমনি পরস্পরের আসল রূপ ঢাকা পড়ে থাকে। বিয়ের পর শয়তান সরে যাওয়ায় তা সামনে এসে পড়ে। তখন এতদিন ধরে 'চেনা' মানুষটিকেই 'অচেনা' লাগে।

আল্লাহ্‌র ইচ্ছার ওপরে যে আপনার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়, সে আপনাকে সুখী করতে পারবেনা, কোনদিন না। আর আল্লাহ্‌র ওপর ভরসা রেখে, তাঁরই নির্দেশিত পন্থা মোতাবেক জীবনসঙ্গীনীর দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিয়ে যে ছেলে একটা 'অচেনা' মেয়ের হাত ধরতে পারে, আল্লাহ্‌ তার জীবনে একটা ম্যাজিক দিয়ে দেন। সেই ম্যাজিকের বলে নিতান্ত সাধারণ চেহারার মেয়েটি তার চোখে রাজকন্যার চেয়ে লাবণ্যময়ী হয়ে ওঠে, সন্তানেরা চক্ষুর শীতলতা হয়ে ওঠে। দ্বীনের পথে চলা স্বামী-স্ত্রীর জীবনে বিলাস থাকেনা, বাহুল্য থাকেনা, কৃত্রিমতা থাকেনা; যেটা থাকে তার নাম শান্তি।

শান্তি সবাই খোঁজে। বেশিরভাগই খোঁজে শান্তির যিনি মালিক, তাঁকে অসন্তুষ্ট করে। আফসোসের বিষয়ই বটে।

Collected From
Brother
Jubaer Hossain

ব্যর্থ বিয়েঃ একটি বিশ্লেষণ

একবার এক তরুণ আমাকে অসন্তোষের সুরে বলেছিল, "আমার বিয়েটা ব্যর্থ হয়েছে"। আমি সান্তনা দিয়ে উত্তরে বলেছিলাম, "যদি তোমার তালাক হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ্‌'তালা তোমাকে আরেকজন স্ত্রী দেবেন, ইনশা'আল্লাহ্‌"। সে উত্তরে  বলেছিল, "না , না, আমাদের তালাক হয় নি। কিন্তু আমাদের বিয়েটা ব্যর্থ হয়েছে, তবে আমরা এখনো একই সাথে থাকি"।

 আমাদের সমাজের ব্যর্থ বিয়েগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য ক্যাটাগরি হচ্ছে এই ধরনের বিয়েগুলো। "আমরা সুখী নই, কিন্তু আমরা একই সাথে বসবাস করি"---আমাদের আশেপাশের অধিকাংশ 'ব্যর্থ বিয়ে' এই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন কারণে অনেক দম্পতি হতাশার সাথে তাদের দুর্বিষহ বিবাহিত জীবনকে টেনে বেড়ায়। তাদের ভেতরে কেউ কেউ সমাজ- লোক লজ্জা-পারিবারিক মর্যাদার কথা ভাবেন।  কেউ আবার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা [নিজের ও সন্তানের] চিন্তা করেন, একবার বিয়ে ভেঙে গেলে আবার কে বিয়ে করবে  (বিশেষ করে মেয়েরা), বাবা-ভাই যদি না দেখে তাহলে কোথায় যাবে --- এইসব ভেবে শোচনীয় দাম্পত্য জীবন কাটায়।

 "আমি জানি আমার মেয়ে খুব কষ্টের ভেতর আছে। তার স্বামী তার ভরণপোষণ করতে চায় না, তাই পেট চালানোর জন্য তাকে কাজ করতে হয়। শাশুড়িসহ শ্বশুরবাড়ির অনেকেই তার সাথে অকথ্য দুর্ব্যবহার করে, বাড়ির সমস্ত কাজ তাকেই করতে হয়। কিন্তু যেখানে ২৫-৩০ বছরের অবিবাহিত-সুন্দরী-উপার্জনশীল মেয়েদের সহজেই পাওয়া যায়। সেখানে আমার মেয়ের এখন  ৩৭ বছর; শুধু তাই নয়, তার নিজেরও দুটো মেয়ে আছে। আমি যদি এখন আমার মেয়েকে  ছাড়িয়ে নিয়ে আসি, তাহলে আবার কার কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিব? কে তাকে দুই মেয়ে নিয়ে বিয়ে করবে? আর তার মেয়েদেরই বা কি ভবিষ্যৎ হবে?" --- এই ছিল আমাকে বলা এক ভুক্তভোগী বাবার যন্ত্রণাকাতর স্বীকারোক্তি।

 একজন সৎ পরামর্শদাতা এই ধরনের পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম। এক বা একাধিক অভিজ্ঞ অথবা প্রফেশনাল উপদেষ্টার আন্তরিক হস্তক্ষেপে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ঝগড়া বিবাদের মীমাংসা হতে পারে। সুরা নিসার পঁয়ত্রিশ নং আয়াতে পারিবারিক  কলহ  মীমাংসার  এক সুন্দর পন্থা বর্ণনা করা হয়েছে, " যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে।  যদি তারা উভয়েই মীমাংসা চায় তবে আল্লাহ্‌ তাদের মিলন সাধনের (অনুকূল) পরিবেশ সৃষ্টি করবেন"। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দিলে, বিরোধ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন হবার পর্যায়ে পৌঁছাবার আগেই ঘরে তার সংশোধন ও মীমাংসার চেষ্টা করা উচিত। বেশী লোক জানাজানি বা প্রচার উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর। এজন্য এই পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্বামী ও স্ত্রীর উভয়ের পরিবার থেকে একজন করে লোক নিয়ে দু'জনের একটি সালিশ কমিটি বানাতে হবে। তারা উভয়ে মিলে বিরোধের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাবেন। তারপর এক সাথে বসে এর সমাধান ও মীমাংসার পথ বের করবেন। স্বামী-স্ত্রী চাইলে নিজেদের আত্মীয়দের মধ্য থেকে নিজেরাই একজন করে লোক বাছাই করে আনতে পারে। আবার উভয়ের পরিবারের বয়স্ক লোকেরা এগিয়ে এসে এ ধরনের সালিশ নিযুক্ত করতে পারে। স্ব-স্ব পরিবার থেকে নির্বাচনের ফলে সালিসকারী ব্যক্তিগণ ছেলে-মেয়ের (স্বামী-স্ত্রীর) দোষ-ত্রুটি, মেজাজ-মর্জি সম্বন্ধে সম্যক ওয়াকেবহাল। সুতরাং তাদের জন্য ন্যায় বিচার ও বিরোধ নিস্পত্তি করা সহজতর হবে।

 আয়াতের শেষ অংশটি বিশেষভাবে লক্ষ্য করুনঃ

"যদি তারা উভয়েই মীমাংসা চায় তবে আল্লাহ্ তাদের মিলন সাধনের [অনুকূল] পরিবেশ সৃষ্টি করবেন"।

 এই প্রেক্ষিতে আমি একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতে চাই। এই ধরনের একটি সালিশ নিষ্পত্তির জন্য আমাকে একবার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই তাদের অবস্থানে অনড়, পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব। বিয়ের পর থেকেই ছোটখাট বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য চলতে চলতে সেটা বর্তমানে চরম অবস্থায় পৌঁছেছে।  স্বামী-স্ত্রী উভয়েই অনমনীয় এবং 'যত দ্রুত সম্ভব ছাড়াছাড়ি হয়ে যাক' সেটাই চাইছে। আমরা যারা সালিশের কাজে নিয়োজিত ছিলাম তারাও প্রায় হাল ছেড়ে দিয়ে হতাশাগ্রস্থ। এহেন নাজুক পরিস্থিতিতে আমার দাদী সাইয়েদা আব্দুল কারিম নাদিয়াদওয়ালা ঝড়ের বেগে মঞ্চে পদার্পণ করলেন। তিনি বললেন, "তোমরা কোনরকম সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাকে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের সাথে  একান্তে কথা বলতে দাও"। স্বামী-স্ত্রী দু'জনে আমার দাদীকে অনুসরণ করে অন্য ঘরে চলে গেল। আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কয়েক মিনিট পর তারা তিনজন হাসি হাসি মুখে ফিরে এলো; আমার দাদী আনন্দিত ও রাশভারি মেজাজে ঘোষণা করলেন, "তাদের ভেতর মিটমাট হয়ে গেছে"! এই দম্পতি এখন পর্যন্ত সুখেশান্তিতে ঘর-সংসার করছে। এই ঘটনার পর থেকে বহুবার বিভিন্ন সময়ে আমি আমার দাদীর কাছে জানতে চেয়েছি, "আপনি এমন কি বলেছিলেন, যার ফলে সেই দম্পতির ভেতর এতো দ্রুত মিটমাট হয়ে গেল এবং তারা তালাকের কথা আর মুখেও নিল না?" কিন্তু প্রতিবারই তিনি স্মিত হেসে নীরব থাকতেন। তার দশ বছর পর তিনি যখন শয্যাশায়ী, আমি দাদিকে আবার সেই প্রশ্ন করলাম। এইবার তিনি স্মিত হেসে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন, "আমি দু'জনকে কষে দুটো চড় দিয়েছিলাম"!

 অধিকাংশ পরিবারে এমন কিছু মুরুব্বী থাকেন যারা ভাঙ্গনের মুখে পতিত পরিবারকে একদম শেষ মুহূর্তে আল্লাহ্‌র সাহায্যে রক্ষা করতে সক্ষম হন। তবে একটা ব্যপার পাঠকদের পরিস্কারভাবে বুঝতে হবে, সালিশকারীর প্রতি প্রশ্নাতীত ভালোবাসা ও মমতা না থাকলে, শুধুমাত্র চপেটাঘাত করে এই সমস্যার সমাধান করা যায় না। সালিশকারীর অনন্যসাধারণ প্রজ্ঞার সামনে উভয়েই (স্বামী-স্ত্রী) তাদের অনড় ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ অহং থেকে বেরিয়ে এসে নমনীয় ও আপোষের মনোভাব নিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে সক্ষম হয়েছিল; ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্‌'তালা তাঁর অসীম করুণায় তাদের জন্য মিলনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেন।    

 [Translated from the book "I want to marry" by Nisaar Yusuf Nadiadwala]

 courtesy : Sefat Mahjabeen

মার্কিন অভিনেত্রীকে ইভ টিজিং এবং কিছু বিশ্লেষণ

দ্যা গার্ডিয়ানে একটি নিউজ চোখে পড়লো। এক মার্কিন অভিনেত্রী গোপন ক্যামেরা সাথে নিয়ে নিউ ইয়র্ক এর রাস্তায় প্রায় ১০ ঘণ্টা হেঁটেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল তাকে এই সময়টায় কতবার ইভ টিজিং-এর শিকার হতে হয়, তা দেখা। তার রিপোর্ট অনুযায়ী তাকে ১০০ বারেরও বেশি ভারবাল এবিউসের শিকার হতে হয়েছে। এছাড়া "অসংখ্যবার" 'চোখ টেপা' আর 'শিশ' বাজানোকে তিনি হিসেবের বাইরেই রেখেছেন।

বলা বাহুল্য, তার স্কিনী জিন্স ও স্কিনী টপস এর ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি যতটা ভারবাল এবিউসের কথা বলেছেন, মোটমাট প্রায় সবই তার শারীরিক গঠনকে উদ্দেশ্য করেই করা। এছাড়াও তার গায়ের কাছে এসে ঘেঁষতে চাওয়ার কারণও তাই।

আমি জানি ইভ টীসিং এ পোষাকের ভূমিকা নিয়ে কথা বললে এক শ্রেণীর বিদ্রোহী জনতা এখানে বিক্ষোভ মিছিল করবেন। তবে কিছু বিষয় চোখ বন্ধ করে রাখলেই সামনে থেকে গায়েব হয়ে যায় না।

এ কথা সত্য, যে এই পৃথিবীতে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখলেও ইভ টীসিং থাকবেই। ধর্ষণ হবেই। কেননা ইভ টীসিং ও ধর্ষণ - সবই একজন পুরুষের মানসিক বৈকল্য নির্দেশ করে। আর কিয়ামতের আগ পর্যন্ত মানসিক বৈকল্য থাকবে, এ কথা বলাই যায়। তবে যে কথা বলা যায় না তা হল, অন্যের মানসিক বৈকল্যকে দায়ী করলে নিজের দায়িত্ব খালাস হয়। আমরা ড্রাগ এডিক্ট ছিনতাইকারীদের চিনি, ডাকাতদের চিনি, চোর বাটপারও চিনি। এরা সবাই অসুস্থ মানসিকতার। নেকলেস বা ব্যাগের জন্য কারো খুন করে ফেলা কোন সুস্থ মানুষের কাজ নয়। কিন্তু আমরা যারা আমজনতা, তারা এইসব চোর-ডাকাত বা ছিনতাইকারী থেকে বাঁচতে কোন পদক্ষেপ নিয়ে থাকি কি?

অবশ্যই। আমরা আমাদের মোটা অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্কের ভলটে জমাই। ঘরের ড্রইং রুমে সাজিয়ে রাখি না। ঘরের স্টীলের আলমারিতে তালার পর তালা মেরে সোনার অলঙ্কার লুকিয়ে রাখি। দরজার চৌকাঠে ঝুলিয়ে রাখি না। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় গেটে ঝুলাই ঢাউস সাইজের তালা। চাচা চৌধুরীর মত হাঁ করে খোলা রাখি না। শুধু তাই না, আমাদের ল্যাপটপ, মোবাইল, এমনকি ফেসুবুক ইমেইল ইত্যাদি একাউন্টেও দিয়ে রাখি জঘন্য প্যাঁচালো মার্কা পাসওয়ার্ড। কেন? এইসবকে বলা হয় সাবধানতা। সচেতনতা। আমরা সবাই বুঝি চোর চাট্টার মানসিক অবস্থার দোহাই দিলে আমাদের সম্পদ চুরি যাওয়া থেকে বেঁচে যায় না। আমরা বুঝি, ছিনতাইকারীর মা তাকে ছোটবেলায় থাপ্পড় দেয়নি বলে অভিযোগ করলে আমার পক্ষে মধ্যরাতে একাকী অন্ধকার রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো নিরাপদ হয়ে যায়না।

একটা কুকুরকে যতই ট্রেনিং দেয়া হোক, রাতের বেলা তাকে খাঁচাতেই রাখা হয়। একে বলে সেইফটি। কুকুরের মালিকও বোঝে হয়তো কুকুরটি কখনই অদ্ভুত আচরণ করবেনা। কিন্তু তারপরেও তিনি থাকেন সাবধান। এতেই তার ও তার আশেপাশের সকলের কল্যাণ। অশিক্ষিত, বেহায়া, নির্লজ্জ পুরুষ, যারা ইভ টিসীং আর ধর্ষণ করে, আমরা তাদের ব্যাপারে অভিযোগ করবো। তাদের মা তাদের কেন শিক্ষা দিতে পারেন নাই, সেটা নিয়ে সেমিনার করবো, ব্লগ লেখব, মিছিল করবো। কিন্তু সাথে আমরাও সাবধান থাকবো। ঘরের গেটে তালা মারবো। চোরের ব্যাপারে এলাকাবাসীকে মাইকিং করার পর নিজের ঘরেই খিল মারবো।

একটা কমেডি শো দেখছিলাম অনেক আগে। এক বাসায় চোর ঢুকল খোলা জানালা পেয়ে। ঢুকেই যখন সব চুরি করতে লাগলো, ঘরের মানুষ তাকে কিছুই বলল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। তো চৌর্যকর্ম সম্পাদন করে ফিরে যাবার সময় চোর বলল, "আপনাদের মত ঘর আর ঘরের মানুষ, সকল চোরের জন্য একটি স্বপ্ন।"

আসুন আমরা টীসারদের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠ তুলি, আর সাথে নিশ্চিত করি, আমাদের মত মানুষ যেন তাদের স্বপ্ন না হয়।

-- written by brother
Nazmus Sakib