আমাদের সময়ের সাপেক্ষে 'তাওবাহ' এর ক্ষেত্রে কিছু নসিহা

বনি ইসরাইলের ১০০জন হত্যাকারী ব্যক্তির তাওবাহ এবং সেই আলোকে আমাদের সময়ের সাপেক্ষে 'তাওবাহ' এর ক্ষেত্রে কিছু নসিহাঃ

বনি ইসরাইলের একজন লোক ছিল যে ৯৯ টি মানুষকে হত্যা করেছিল। সে তওবা করার চিন্তাভাবনা করছিল। তাই সে একজন আবিদের কাছে গেল। [আবিদ ও আলেম এর মধ্যে পার্থক্য আছে]

সেই লোকটি এই আবিদকে বলল, "আমি ৯৯ টা মানুষকে হত্যা করেছি। আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন?"

আবিদ যখন এটা শুনলেন তখন বললেন যে, "তুমি ৯৯ টা লোককে খুন করেছ! আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা কিছুতেই তোমাকে ক্ষমা করবেন না‍!।" এই কথা শুনে সেই লোকটা উক্ত আবিদ ব্যক্তিকে খুন করে ফেলল! এরপরও সে তওবা করার জন্য উঠেপড়ে লাগলো। তার অন্তরের ভিতর কিছু অংশ হলেও ভাল ছিল। সুতরাং এ সময়ে সে খোঁজ করলো যে কাকে জিজ্ঞাসা করা যায়, সে জানতে পারলো এক আলেম এর কথা। সে সেই আলেমের কাছে গেল এবং বললো, "আমি ১০০ টা মানুষকে হত্যা করেছি। আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন?"

উক্ত আলেম তাকে বললেন, "হ্যাঁ, তোমার আশা আছে! তুমি যদি তওবা কর তাহলে আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন যদিওবা তুমি ১০০ টি লোককে হত্যা করেছ। যদি আল্লাহ তোমার জন্য তওবার দরজা খুলে রাখেন তবে কে তোমাকে তা থেকে প্রতিরোধ করবে?"

কিন্তু আলেমের ফতোয়া এখানেই শেষ হয় নি।তিনি আরও বলেন, "তোমাকে এই শহর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হবে। এইটা হল খারাপ একটা শহর, আমি চাই যে তুমি এই শহর ছেড়ে অন্য শহরে যাও যেখানে এমন সব লোকেরা রয়েছে যারা আল্লাহর ইবাদত করে ফলে তুমি তাদের সাথে ইবাদত করতে পারবে।"

হাদীসটি আরোও দীর্ঘ। আমি মূলত ফোকাস করতে চাচ্ছি উক্ত আলিমের ফাতাওয়ার দিকে। উনি বলেছিলেন- 'তুমি এই শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে যাও'

আমার মূল ফোকাসটা এখানেই। ইসলামের প্রতি আগ্রহী হবার পর একজন মুসলিম সর্বপ্রথম ভাবতে থাকে, সে কিভাবে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। কটু হলেও সত্য আমাদের অনেক পাপই সমাজ, পরিবেশ ও বন্ধুদের সাথে সম্পর্কিত। একজন চাইলেও সে তার চিরচেনা পরিবেশের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। অন্তঃত প্রথম দিকে তার মধ্যে সেই পরিমাণ ঈমানী শক্তি থাকে না।

তাওবাহ করতে চান? প্রথমেই আপনার বন্ধুজগত থেকে দূরে সরে যান। নিয়মিত নামায পড়ুন। সম্ভব হলে নিজের ঘর পরিবর্তন করুন। রুমের কনফিগারেশন চেঞ্জ করুন। ইস্তেগফার পড়ুন। ইসলামি বই নিয়মিত পড়ুন। যাই-ই পড়বেন সেটা বোঝার ও নিজের জীবনে আপ্লাই করার চেষ্টা করুন। সুন্নাহ এর প্রতি নজর দিন। প্রথম দিকে বেশ কষ্ট হবে। অনেকে ব্যংগ করবে। একসময় সব সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। কিছুদিনের জন্য বন্ধুহারা হয়ে পড়তে পারেন, তবে আল্লাহ ভবিষ্যতে আপনাকে আরোও উত্তম বন্ধুত্ব দান করবেন ইন-শা-আল্লাহ।

রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন। নিজের পাপের কথা চিন্তা করে লজ্জিত হোন। আল্লাহ'র কাছে ক্ষমা চান। এক্সট্রা নামায পড়ুন (নফল) এবং নামায দীর্ঘ করুন (অন্তঃত সিজদাহ)। গলার স্বর নিচু রাখুন। নম্রতা ও বিনয়ের পথে ধাবিত হোন। অশ্লীল শব্দ ব্যবহার এবং অন্যকে কথার দ্বারা আঘাত করা থেকে বিরত থাকুন। পরিবারের সাথে সময় কাটান, পারিবারিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটান, ছোট ভাই-বোনের সাথে মজা করুন, বাবা-মা'র ত্যাগের কথা চিন্তা করুন। মৃত্যুকে স্মরণ করুন। এমনভাবে বাচুন যেন আজই আপনার শেষ দিন।

[নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে কিছু নাসিহা। একজন ভাইও উপকৃত হলে সেটাই হবে লিখাটির সার্থকতা]

Written by: Muhammad Makamam Mahmud

No comments:

Post a Comment