আমরা যেন অ্যাশট্রের মত না হই

আমি যে ছবিটা দিয়েছি সেখানে দেখা যাচ্ছে একটা অ্যাশট্রে যেখানে আবার প্রতীকের মাধ্যমে সিগারেটকে 'না' বলার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। মানে তাকে বানানোই হয়েছে সিগারেটের শেষাংশ ফেলার জন্য কিন্তু নিজেকে 'কল্যাণকামী' হিসেবে দেখানোর জন্য বার্তাও দিচ্ছে। এই ধরণের পাত্র কিংবা সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে "সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ" লেখা আমাদের হাসির খোরাক জোগায় বটে, কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যায় আমরা নিজেরাই কখনো কখনো এই অ্যাশট্রের মত আচরণ করি।

সমাজে খারাপ আছে; যা খারাপ তাকে খারাপই বলতে হবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু সমস্যাটা হল মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহের সাথে খারাপটাকে নিন্দে করতে যেয়ে সেটার প্রচার করে ফেলায়। গতবছর ঈদের আগে একজন পর্নস্টারের নামে বাজারে পোশাক এসেছিল। পোশাকটির বিজ্ঞাপন সবচেয়ে বেশি করেছিল, অন্তত আমার দেখামতে- ইসলামপন্থীরা। তারা প্রায় প্রতিটা কথায় ঐ পর্নস্টারের নাম উল্লেখ করে দেশটা গোল্লায় যাওয়ার হাহাকার ব্যক্ত করেছিলেন। এতে কি ওই পোশাক বিক্রি বন্ধ হয়েছিল? না, বরং যারা কখনো ওই নামটি শোনেনি তারা পরিচিত হয়েছিল, পোশাকটার প্রচার আরও বেড়েছিল।

আপনি যখন দ্বীনের পথে চলা শুরু করবেন তখন দেখবেন সমাজের বেশিরভাগ পরিস্থিতি আপনার সাথে খাপ খাচ্ছে না। খাচ্ছে না কারণ আপনি এখন যেভাবে চিন্তা করেন সমাজের বেশিরভাগ মানুষ সেভাবে করে না। এই কনট্র্যাডিকশন আপনার অন্তরে ক্ষতের সৃষ্টি করবে স্বাভাবিক, কিন্তু ক্ষতটাকে বারবার চুলকে বাড়িয়ে দেবার মধ্যে ফায়দা নেই।

কিছু মানুষকে দেখি সমাজের ছেলেমেয়েরা কীরকম নষ্টামি করে বেড়ায় তার বিবরণ দিয়ে সারাক্ষণ পোস্ট দিতে থাকেন। মেয়েরা কেন অশালীন পোশাক পরে (পোশাকের বর্ণনাসহ), ছেলেরা চিপায় চাপায় কী করে সব কিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ, মানুষ ভালো না, সমাজ ভালো না, দেশ ভালো না এই সেই করে আক্ষেপ করতে করতে দিন কাবার। এর মাধ্যমে ক্ষতির যে ব্যাপারটা ঘটে সেগুলো এরকমঃ

(১) যারা খারাপ ব্যাপারগুলো সম্পর্কে জানে না তারা পরিচিত হয়।

(২) যারা জানে এবং খারাপ বলে মানে তারা বারবার এসব শুনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন অনেকটা সহনীয়তা চলে আসে, অতটা খারাপ আর লাগে না।

(৩) বিরামহীনভাবে খারাপের বিবরণ শুনতে শুনতে মনে হয় গোটা সমাজটাই খারাপ, এই নষ্ট সমাজে ভালো হয়ে থাকাটাই অসম্ভব। তখন সে নিজেও খারাপের পথে বা বাড়ায়।

(৪) মানুষের মনে অযথা সন্দেহ সৃষ্টি করে। স্বামী তার দ্বীনদার স্ত্রীকে সন্দেহ করবে-'ও কি তাহলে জাহেল যুগে এই করেছে, সেই করেছে'। সবাই খারাপ -এমন একটা পিকচার মানুষের মনে সেট করে দেবার উপকারিতা আসলেই আছে কি?

মোটকথা, আমরা যেন অ্যাশট্রের মত না হই, যে সিগারেট খেতে নিষেধ করে খেয়াল করে না নিজেই সিগারেট খেতে উৎসাহিত করছে। ফেসবুকে লেখালেখির প্রথম যুগে আমার লেখার মধ্যেও এই টাইপের একটা হতাশার টোন ছিল। যখন বুঝেছি এটা ইমম্যাচিউর কাজ, তখন অ্যাভয়েড করেছি।

আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য সহজ করুন

-- জুবায়ের হোসেন

No comments:

Post a Comment