বাংলাদেশীদের নাম জটিলতাঃ দরকার স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের

বাংলাদেশীদের নাম জটিলতাঃ দরকার স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের
-- আবূ সামীহাহ্‌ সিরাজুল ইসলাম
  
বাংলাদেশীদের নাম জটিলতা একটা বিষয় যা নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয় বিভিন্ন সময়ে। নাম রাখার ক্ষেত্রে কোন বিশেষ স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেইন না করার জন্য নানা জটিলতা সৃষ্টি হয় বিভিন্ন স্থানে। স্বার্থান্বেষী দূর্নীতিবাজ সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাদের অনেকেই নামের স্ট্যান্ডার্ডহীনতার সুযোগ গ্রহণ করে অনেক সময় অন্যায় সুবিধা আদায়ে তৎপর হন অনেক নির্বিবাদী সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলার মাধ্যমে। এ ছাড়াও অনেক সময় নামের ধরণ নিয়ে অহেতুক আলোচনা-সমালোচনায় জড়িয়ে গিয়ে অনেকেই পড়েন বিপাকে। কিছুদিন আগে প্রথম আলোর কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান সহ আরো অনেকেই এরকম বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছেন। এদের কার কী উদ্দেশ্য ছিল সে বিতর্কে আপাততঃ যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই আমার। এছাড়া বিদেশে গিয়েও বাঙালীদের তাদের নাম নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।

আমাদের নাম রাখার ক্ষেত্রে দেশের মুসলিম জনগণ অনেকেই নামের আগে মুহাম্মদ যোগ করেন, যদিও এ ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নির্দেশনা নেই। কারো নাম যদি মুহাম্মদ রাখা হয় তাতে কোন ক্ষতি নেই বরং রসূলুল্লাহ (সঃ) প্রতি সম্মান ও ভালবাসারই তাতে প্রকাশ ঘটে। কিন্তু ব্যাপারটা হলো আমাদের দেশে সন্তানদের নাম মুহাম্মদ রাখা হয়না; বরং মুহাম্মদকে টাইটেল হিসেবে নামের সামনে যোগ করা হয়। এজন্য বাংলাদেশে বা ভারতীয় উপমহাদেশে কাউকে মুহাম্মদ বলে ডাকা হয়না। অনেক সময়, বরং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই, মুহাম্মদ পুরোটা লিখাও হয়না। লিখা হয় মুঃ, মোঃ, মোহাং, ইত্যাদি। এতে মুহাম্মদ নামের প্রতি কোন সম্মান প্রকাশ হয়না। নাম যদি রাখতেই হয় তাহলে কারো নাম মুহাম্মদই রাখা উচিৎ এবং তাকে মুহাম্মদ বলেই সম্বোধন করা উচিৎ। আমাদের নামের বানান যদি ইংরেজীতে লিখা হয় তাহলে দেখা যায় Muhammad কে সংক্ষেপে লিখা হচ্ছে MD, বা Mohd হিসেবে। এ দিয়ে নামের প্রতি সুবিচার করা হয়না। পশ্চিমে অনেক বাঙালী মুসলমানকে তাদের MD নামের জন্য অনেক বিড়ম্বনার শিকারও হতে হয়। অনেকের কাছ থেকে ডাক্তার সম্বোধনের বিড়ম্বনা হচ্ছে এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ব্যক্তিগতভাবে এই লেখকও এ ধরণের বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন।

মহিলাদের নামের আগে যোগ করা হয় মুসাম্মৎ বা মোসাম্মৎ। বাঙালী মুসলমানদের সাধারণ ধারণা হল এটা মুহাম্মদের স্ত্রীরূপ। প্রকৃত ব্যাপার হল, এটা মুহাম্মদের স্ত্রীবাচক প্রতিশব্দ নয়। বরং এর মানে হলঃ "তার নাম রাখা হল" বা "তাকে ডাকা হয় ----নামে"। সুতরাং কারো নাম যদি হয় মুসাম্মৎ ফাতিমা তাহলে এর মানে দাঁড়াবে "তার নাম রাখা হল ফাতিমা" বা "তাকে ফাতিমা নামে ডাকা হয়"। তাই কারো নামের আগে মুসাম্মৎ লাগানোর কোন মানে হয়না।

নাম রাখার ক্ষেত্রে আমাদের আরেকটা যে সমস্যায় পড়তে হয় তা হল ডাক নাম। আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের একটা (আসলে কয়েকটা) ভাল নাম আবার সাথে একটা ডাক নাম। মানুষের নাম রাখা হয় ডাকার জন্য/পরিচিতির জন্য। এজন্য সন্তানের যে নাম রাখা হয় তাকে সে নামেই ডাকা উচিৎ। অবশ্য ডাক নাম থাকতে পারে যা আসল নাম থেকেই উৎসারিত। ইউরোপিয়ান ধারাতে আমরা অনেকের ডাক নাম দেখতে পাই। আর সে ডাক নামগুলো একটা কনভেনশনের আলোকেই রাখা হয়। যেমন বিল। কারো নাম উইলিয়াম হলে তাকে ইংরেজী ভাষীরা বিল বলে থাকেন। তার মানে কারো ডাক নাম বিল হলে তারা সহজেই বুঝে নিতে পারে লোকটার আসল নাম উইলিয়াম। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কথাই ধরা যাক। ভদ্রলোকের আসল নাম উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন। কিন্তু তিনি বিল ক্লিন্টন হিসেবে পরিচিত। সব উইলিয়ামরাই ইংরেজীভাষীদের কাছে বিল হিসেবে পরিচিত। একইভাবে কাউকে ডিক ডাকা হলে তারা জানে যে তার আসল নাম রিচার্ড, কাউকে "বব" বা "ববি" ডাকা হলে তারা জানে যে ঐ ব্যক্তির আসল নাম রবার্ট। এগুলো সবই কনভেনশন। তাই এ ধরণের ডাক নামে কোন সমস্যা নেই।

ডাক নামের আরেকটা প্রচলন আছে অনেক জাতির মধ্যে, যা উৎসারিত হয় ব্যক্তির শারীরিক বা চারিত্রিক ও সামাজিক গুণাবলীর প্রতিফলন হিসেবে। যেমন আয়েশাকে (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সঃ) ডাকতেন হুমায়রা বলে। তিনি এটা এজন্য বলতেন যে আয়েশার (রাঃ) গায়ের রঙ ছিল লালছে-গোলাপী। রসূলুল্লাহর পরদাদাকে হাশিম [crusher] বলা হত কারণ তিনি রুটি গুড়ো [crush] করে সুরুয়ার সাথে মিশিয়ে হাজীদের খেতে দিতেন।

কিন্তু আমাদের ডাক নামের কোন স্ট্যাণ্ডার্ড বা কনভেনশন নেই। ফলে কারো ডাক নাম শুনে তার আসল নাম বা চারিত্রিক বা শারীরিক গুণাবলী বুঝার উপায় নেই। এসব ডাক নামগুলোকে আবার মূল নামের সাথে যোগ করে সরকারী কাগজ-পত্রেও লিখা হয়। যেমন কারো নাম আবুল হাশেম মুহাম্মদ টুকু। এক্ষেত্রে টুকু ডাক নামটা মূল নামের সাথেই কাগজে-কলমে স্থায়ী হয়ে যায়। ফলে সমস্যা হয়।

আমাদের দেশীয় মুসলমানদের মধ্যে নাম রাখার আরেকটা ধরণ হচ্ছে "আবূ" দিয়ে নাম রাখা। যেমন আবুল কাশেম, আবুল হাসান, আবূ ইউসুফ ইত্যাদি। এগুলো কোনটাই নাম নয়, বরং কুনিয়াত বা পরিচিতি বাচক নাম। এ নামগুলোর মানে করলে দাঁড়াবে 'কাশেমের পিতা', হাসানের পিতা, এবং ইউসূফের পিতা। এগুলো আরবদের প্রথা। তারা কারো সন্তান হওয়ার পর পিতাকে সম্মান দেখানোর নিমিত্তে সে সন্তানের নামে পিতাকে সম্বোধন করত। একই ভাবে মায়েদেরকে বলা হয় উম্মু অমুক। আমাদের দেশেও এ পদ্ধতি প্রচলিত আছে। লোকজন বলে থাকে "অমুকের বাপ" বা "অমুকের মা"। উপরের নামগুলো যথাক্রমে রসূলুল্লাহ্ (সঃ), আলী (রাঃ) ও ইয়াকুবের (আঃ) নাম। অনেক সময় সন্তান না থাকলেও আরবরা কাউকে কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তির নামের আলোকে আবূ দিয়ে সম্বোধন করে। যেমন কারো নাম আলী হলে তাকে আবুল হাসান ডাকা হয়, কারণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব আলী (রাঃ) এর বড় ছেলে ছিলেন হাসান (রাঃ), এবং সেই আলোকে আলীকে (রাঃ) আবুল হাসান ডাকা হত। একইভাবে কারো নাম ইয়াকুব হলে তাকে আবূ ইউসুফ ডাকা যেতে পারে। কিন্তু তা না করে লোকদের নামই রেখে দেয়া হয় আবূ দিয়ে। আমাদের দেশে অসংখ্য লোকের নাম আবুল কাশেম, আবুল হাসান, আবূ সুফিয়ান, আবু হেনা, ইত্যাদি। কারো নাম কাসেম (কাশেম নয়) হতে পারে, হাসান হতে পারে, সুফিয়ান হতে পারে, হেনা হতে পারে। কিন্তু এগুলোর আগে অহেতুক আবূ লাগানোর কোন মানে নেই। অবশ্য কিছু নাম আছে যেগুলো আবূ দিয়ে রাখা যেতে পারে এবং সেগুলো অর্থবোধকও। যেমন আবূল খায়ের। এর মানে হল তার সব কিছু ভাল।

আমাদের দেশে আরেক ধরণের নাম হচ্ছে সংক্ষেপিত (abbreviated) নাম। যেমন এ, কে, এম, অমুক (AKM ...), আ, ন, ম, তমুক (ANM .....), ইত্যাদি। এ, কে, এম, সম্ভবত আবূল কাসেম মুহাম্মদ এবং আ, ন, ম, সম্ভবত আবূ নোমান মুহাম্মদ। এগুলো নাম রাখার কতগুলো অর্থহীন পদ্ধতি। এ ধারাটা লোকেরা গ্রহন করেছে পূরনো দিনের মুসলিম স্কলারদের নামের অনুকরণ করতে গিয়ে। আগের দিনের আলেমদের পরিচিতির জন্য তারা তাদের পুরো নাম দীর্ঘ করে লিখতেন। যেমন প্রসিদ্ধ হাদীস সংকলন রিয়াদুস সালেহীনের সংকলক ইমাম নববীর নাম। তাঁর পুরো নাম লিখা হয়েছে এভাবেঃ "আবূ যাকারিয়া মুহিউদ্দীন ইহাহ্য়া ইবন শরফ আন নববী।" এখানে ইমামের মূল নাম হচ্ছে ইয়াহ্‌য়া, তাঁর পিতার নাম শরফ। সেজন্য তিনি ইয়াহ্ইয়া ইবন শরফ। দামেস্কের উপকন্ঠে নওয়া গ্রামে তাঁর জন্ম; সেজন্য তিনি নববী/নওয়ায়ী। তিনি আবূ যাকারিয়া নামে পরিচিত ছিলেন কারণ তিনি ইয়াহয়া। আর মুহিউদ্দীন তাঁর উপাধি যা সমকালীন মুসলমানগণ তাঁকে দান করেছিলেন। এখন আমাদের দেশে যে সমস্ত লোকেরা তাদের নাম এভাবে রাখেন তাদের চিন্তা করা উচিৎ এটার কোন মানে আছে কিনা। যে ছেলেটার নাম রাখা হল "আবুল কাসেম মুহাম্মদ বরকত-উল্লাহ্", তার 'কাসেম' নামে কোন ছেলে হয়নি; তার নামও "মুহাম্মদ" রাখা হয়নি এবং "বরকত-উল্লাহ্" ও তাঁর বাবার নাম নয়। এখন ঘটনাটা কী দাঁড়াচ্ছে?

আমাদের দেশীয় নামের বেশীরভাগই হল যৌগিক নাম। যেমন এই লেখকের নাম সিরাজুল-ইসলাম। এটা একটা যৌগিক নাম। শুধু সিরাজুল ডাকলে এটা একটা অর্থহীন নাম হয়ে পড়বে। প্রকৃত ব্যাপার হল নামটা আরবীতে যখন লিখা হয় তখন লিখতে হয় سراج الإسلام [সিরাজ আল-ইসলাম] রূপে। আরবী ব্যাকরণের ধারায় উচ্চারণের সময় বলতে হয় সিরাজুল-ইসলাম। যদি খালি সিরাজ বলা হয় তাহলে ঠিক আছে। যদি সিরাজুল বলা হয় তাহলে ইসলামও বলতে হবে। নাহলে এটা একটা অর্থহীন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। সেজন্য আমাদের একজন জাতীয় ক্রিকেটার এর নাম "মুহাম্মদ আশরাফুল" শুনতে খাপছাড়া শোনা যায়। তাকে বলা যেত "মুহাম্মদ আশরাফ"। আশরাফুল বললে সাথে অন্য কিছু যোগ করে বলতে হবে।

লিঙ্গভেদ বুঝা না যাওয়ার মত কিছু নামও আমাদের দেশে রাখা হয়। আরবীতে সুস্পষ্টভাবে পুরুষবাচক নামকে আমাদের দেশে দিব্যি মেয়েদের নাম হিসেবে রেখে দেয়া হচ্ছে। যেমন শামীম, শাহীন, ইত্যাদি। আবার আরবীতে মেয়েদের জন্য প্রচলিত কিছু নামকে দিব্যি ছেলেদের জন্য রেখে দেয়া হচ্ছে। যেমন নূর, হুদা, শামস, ইত্যাদি। দেশীয় কিছু নামকেও আবার কনভেনশন লংঘন করে ছেলেদের জন্য রাখা হচ্ছে যা প্রকৃতপক্ষে হওয়া উচিৎ ছিল মেয়েদের। যেমন ফুলের নাম। কনভেনশনালী ফুলের নাম মেয়েদের নাম হয়। কিন্তু দেখা যায়, শিমুল, পলাশ, টগর ইত্যাদিকে দিব্যি ছেলেদের নাম হিসেবে রেখে দেয়া হচ্ছে। অথচ এগুলো মেয়েদের নাম হওয়ার কথা ছিল।

আমাদের নামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা যেখানে সেটা হল কারো নাম থেকে তার বাবার নাম বা বংশের নাম বুঝার কোন উপায় থাকেনা। নাম রাখা হয় একেকজনের কয়েকটা এবং এর সবগুলোই একজনের নাম। ধরা যাক কারো নাম মুহাম্মদ ফারহান শাহীন অথবা আবূ নোমান মুহাম্মদ রকিবুল ইসলাম। এখানে প্রথম নামটার তিনটা অংশ এবং তিনটি অংশই ঐ ব্যক্তির। ওখানে মুহাম্মদ তার নাম নয় বরং প্রচলিত দেশীয় স্টাইলে ওটা নামের আগের টাইটেল। ফারহান এবং শাহীন দু'টোই তার নাম। হয়তো ঐ ব্যক্তির আবার একটা ডাক নামও আছে। দ্বিতীয় ব্যক্তির নামের ক্ষেত্রে হয়তো তার আসল নাম হল রকিবুল ইসলাম। কিন্তু তিনি আবূ নোমান লাগিয়ে নিয়েছেন একটা স্টাইল হিসেবে। আর মুহাম্মদতো দেশীয় ব্যাপার যা আগেই আমরা আলোচনা করেছি। আর যদি নাম একটা স্ট্যাণ্ডার্ড বজায় রেখে রাখা হত তাহলে প্রথম নামের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ হতো লোকটার নাম, ফারহান হত তার বাবার নাম এবং শাহীন তার বংশের নাম। দ্বিতীয় নামটার সমস্যার কথা আমরা আগেই আলোচনা করেছি।

নাম এমন হওয়া উচিৎ যাতে করে প্রথম নামটা হবে ব্যক্তির নাম, দ্বিতীয় নামটা বাবার এবং শেষ নামটা বংশের। এটা ঠিক যে আমাদের দেশে কিছু লোক বংশীয় নাম ব্যবহার করেন। যেমন চৌধুরী, ভূঞা, পাটোয়ারী, কাজী, ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হল এগুলো কোন নাম নয় বরং উপাধি। যিনি জমিদার ছিলেন তিনি চৌধুরী ছিলেন, কিন্তু তাঁর বংশের লোকেরা সব কীভাবে চৌধুরী হয়? যিনি কাজী ছিলেন তিনিতো কাজী ছিলেনই; অন্যরা কীভাবে কাজী হল। একই কথা প্রযোজ্য অন্য উপাধিগুলোর ক্ষেত্রেও। বংশীয় নাম হচ্ছে মানুষের বংশের কোন পূর্বপুরূষের নাম, যার থেকে তাদের বংশধারা বিস্তৃত হয়েছে। নাম দেখেই বুঝা যাওয়ার কথা দুজন ভাই-বোনকে বা দুজন ভাইকে। কিন্তু আমাদের দেশের নাম দেখে দুজন লোক যে পরস্পর সম্পর্কিত তা বুঝার কোন উপায় নেই। বাংলাদেশীদের অনেকেরই নামের শেষে ইসলাম, উদ্দীন, আহমেদ আছে। কিন্তু এরা কেউ একই বংশের লোক নয়। বাইরে গেলে অনেকেই জিজ্ঞেস করে এ ব্যাপারটা নিয়ে। আর এটা বুঝানো বেশ কষ্টসাধ্য কাজ।

নামের স্ট্যাণ্ডার্ডাইজেশন না থাকায় ইনফরমেশন অর্গানাইজেশনে সমস্যা হয় অনেক। বাংলাদেশে এখন কম্পিউটারাইজড রেকর্ড করা হচ্ছে, জাতীয় পরিচয় পত্র ইস্যু করা হচ্ছে, জন্ম নিবন্ধন করা হচ্ছে, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে, ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে নামের স্ট্যাণ্ডার্ডাইজেশন খুব জরুরী। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের আবেদন পত্রে দেখলাম লিখা আছে "নামের প্রথম অংশ First Part [Given Name]" এবং "দ্বিতীয় অংশ Second Part [Surname]।" এখন জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে যদি প্রত্যেক লোককে তাদের একটা বংশীয় নাম গ্রহণ করতে বলা হয় যা তাদের একজন কমন পূর্বপুরূষের নাম হবে তাকে তাদের সারনেম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। চৌধুরী, ভুঞা, ইত্যাদিকে বাদ দিতে হবে। কারণ দেশের এক এক জায়গার চৌধুরী বা ভুঞারা একই বংশের লোক নন। আর এইগুলি কোন বংশীয় নাম নয়, বরং অতীতের কোন ব্যক্তির টাইটেল [পদবী]। বংশের নামের ক্ষেত্রে সেই প্রথম চৌধুরী বা ভুঞার নামটাকে তার বংশের লোকেরা সারনেম হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। নামের প্রথম অংশ হওয়া উচিৎ সেই নাম যা দিয়ে তাকে ডাকা হবে; দ্বিতীয় অংশ হবে পিতার সেই নাম যা দিয়ে তাঁকে ডাকা হয়; আর শেষ অংশ হবে বংশের নাম। এভাবে ইনফরমেশন অর্গানাইজেশন সহজ হয়। এবং তিন অংশ মিলিয়ে খুব কমক্ষেত্রেই দুই ব্যক্তির এক নাম হবার সম্ভাবনা থাকবে।

জন্ম নিবন্ধনের দায়িত্ব যারা পালন করেন তাদেরকে এ সব ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। তাহলে ব্যাপারটা ঠিকঠাক মত হয়ত হবে। এ ক্ষেত্রে আরো যে বিষয়ে দৃষ্টই দেয়া দরকার তা হল, বাংলা নামের রোমান অক্ষরান্তর [transliteration]। কোন না কোন কারণে আজকাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে বাংলা নামের রোমান ট্রান্সলিটিরেশনের খুব খারাপ অবস্থা। বাংলা অক্ষরগুলোর যথাযথ উচ্চারণ না জানার কারণে নিজেদের নামগুলোতে রোমান বর্ণমালায় লিখতে গিয়ে উল্টাপালটা করে ফেলছে বাঙালীরা। আর এ কারণে বিদেশে এসে নামের জন্য হাসি মশকরার শিকার হচ্ছে অনেকেই। যদি স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন থাকত এবং যথাযথ বানানে লিখা হত তাহলে বিভিন্নজনের পরিচিতি বিভ্রাট ও অহেতুক অনেক বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।

No comments:

Post a Comment