মার্কিন অভিনেত্রীকে ইভ টিজিং এবং কিছু বিশ্লেষণ

দ্যা গার্ডিয়ানে একটি নিউজ চোখে পড়লো। এক মার্কিন অভিনেত্রী গোপন ক্যামেরা সাথে নিয়ে নিউ ইয়র্ক এর রাস্তায় প্রায় ১০ ঘণ্টা হেঁটেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল তাকে এই সময়টায় কতবার ইভ টিজিং-এর শিকার হতে হয়, তা দেখা। তার রিপোর্ট অনুযায়ী তাকে ১০০ বারেরও বেশি ভারবাল এবিউসের শিকার হতে হয়েছে। এছাড়া "অসংখ্যবার" 'চোখ টেপা' আর 'শিশ' বাজানোকে তিনি হিসেবের বাইরেই রেখেছেন।

বলা বাহুল্য, তার স্কিনী জিন্স ও স্কিনী টপস এর ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি যতটা ভারবাল এবিউসের কথা বলেছেন, মোটমাট প্রায় সবই তার শারীরিক গঠনকে উদ্দেশ্য করেই করা। এছাড়াও তার গায়ের কাছে এসে ঘেঁষতে চাওয়ার কারণও তাই।

আমি জানি ইভ টীসিং এ পোষাকের ভূমিকা নিয়ে কথা বললে এক শ্রেণীর বিদ্রোহী জনতা এখানে বিক্ষোভ মিছিল করবেন। তবে কিছু বিষয় চোখ বন্ধ করে রাখলেই সামনে থেকে গায়েব হয়ে যায় না।

এ কথা সত্য, যে এই পৃথিবীতে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখলেও ইভ টীসিং থাকবেই। ধর্ষণ হবেই। কেননা ইভ টীসিং ও ধর্ষণ - সবই একজন পুরুষের মানসিক বৈকল্য নির্দেশ করে। আর কিয়ামতের আগ পর্যন্ত মানসিক বৈকল্য থাকবে, এ কথা বলাই যায়। তবে যে কথা বলা যায় না তা হল, অন্যের মানসিক বৈকল্যকে দায়ী করলে নিজের দায়িত্ব খালাস হয়। আমরা ড্রাগ এডিক্ট ছিনতাইকারীদের চিনি, ডাকাতদের চিনি, চোর বাটপারও চিনি। এরা সবাই অসুস্থ মানসিকতার। নেকলেস বা ব্যাগের জন্য কারো খুন করে ফেলা কোন সুস্থ মানুষের কাজ নয়। কিন্তু আমরা যারা আমজনতা, তারা এইসব চোর-ডাকাত বা ছিনতাইকারী থেকে বাঁচতে কোন পদক্ষেপ নিয়ে থাকি কি?

অবশ্যই। আমরা আমাদের মোটা অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্কের ভলটে জমাই। ঘরের ড্রইং রুমে সাজিয়ে রাখি না। ঘরের স্টীলের আলমারিতে তালার পর তালা মেরে সোনার অলঙ্কার লুকিয়ে রাখি। দরজার চৌকাঠে ঝুলিয়ে রাখি না। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় গেটে ঝুলাই ঢাউস সাইজের তালা। চাচা চৌধুরীর মত হাঁ করে খোলা রাখি না। শুধু তাই না, আমাদের ল্যাপটপ, মোবাইল, এমনকি ফেসুবুক ইমেইল ইত্যাদি একাউন্টেও দিয়ে রাখি জঘন্য প্যাঁচালো মার্কা পাসওয়ার্ড। কেন? এইসবকে বলা হয় সাবধানতা। সচেতনতা। আমরা সবাই বুঝি চোর চাট্টার মানসিক অবস্থার দোহাই দিলে আমাদের সম্পদ চুরি যাওয়া থেকে বেঁচে যায় না। আমরা বুঝি, ছিনতাইকারীর মা তাকে ছোটবেলায় থাপ্পড় দেয়নি বলে অভিযোগ করলে আমার পক্ষে মধ্যরাতে একাকী অন্ধকার রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো নিরাপদ হয়ে যায়না।

একটা কুকুরকে যতই ট্রেনিং দেয়া হোক, রাতের বেলা তাকে খাঁচাতেই রাখা হয়। একে বলে সেইফটি। কুকুরের মালিকও বোঝে হয়তো কুকুরটি কখনই অদ্ভুত আচরণ করবেনা। কিন্তু তারপরেও তিনি থাকেন সাবধান। এতেই তার ও তার আশেপাশের সকলের কল্যাণ। অশিক্ষিত, বেহায়া, নির্লজ্জ পুরুষ, যারা ইভ টিসীং আর ধর্ষণ করে, আমরা তাদের ব্যাপারে অভিযোগ করবো। তাদের মা তাদের কেন শিক্ষা দিতে পারেন নাই, সেটা নিয়ে সেমিনার করবো, ব্লগ লেখব, মিছিল করবো। কিন্তু সাথে আমরাও সাবধান থাকবো। ঘরের গেটে তালা মারবো। চোরের ব্যাপারে এলাকাবাসীকে মাইকিং করার পর নিজের ঘরেই খিল মারবো।

একটা কমেডি শো দেখছিলাম অনেক আগে। এক বাসায় চোর ঢুকল খোলা জানালা পেয়ে। ঢুকেই যখন সব চুরি করতে লাগলো, ঘরের মানুষ তাকে কিছুই বলল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। তো চৌর্যকর্ম সম্পাদন করে ফিরে যাবার সময় চোর বলল, "আপনাদের মত ঘর আর ঘরের মানুষ, সকল চোরের জন্য একটি স্বপ্ন।"

আসুন আমরা টীসারদের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠ তুলি, আর সাথে নিশ্চিত করি, আমাদের মত মানুষ যেন তাদের স্বপ্ন না হয়।

-- written by brother
Nazmus Sakib

No comments:

Post a Comment